লকডাউনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রমিকরা আসতে পারছে না
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
খাগড়াছড়ি :
করোনার লকডাউনে দরিদ্র এক কৃষকের ৮০ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগ।
সোমবার সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকায় দুস্থ কৃষক আব্দুল করিমের জমির ধান কেটে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরার নেতৃত্বে ধান কাটায় অংশ নেয়, কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক মো. মনির হোসেন, সদস্য সাইফুল ইসলাম, জিৎজয় ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সদর ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিব ত্রিপুরা, যুগ্ম সম্পাদক তমি ত্রিপুরা, পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জামিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক নুরুসাফা চৌধুরী এবং ২নং পৌর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জীবন মাহামুদ।
এছাড়াও কমলছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক থুইম্রং মারমাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌছে দেন।
কৃষক আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, করোনার এমন দুর্যোগময় মূহুর্তে যখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তখনই আমার ২ কানি জমির ধান কেটে দিতে সাহায্যের হাত বাড়য়েছে ছাত্রলীগ। অর্থ সংকট ও তীব্র রৌদে ধান কাটাতে পারছিলাম না। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ালো ছাত্রলীগ।
মিরসরাই :
মিরসরাইয়ে ধান কাটা ও নেয়ার শ্রমিক সংকটে পড়েছে বোরো চাষিরা। চাষিদের এমন সংকটে এগ্রিয়ে এসেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। বিনা পারিশ্রমিকে চাষিদের ধান কেটে বাড়ি পৌছে দিচ্ছে তারা।
জানা গেছে, করোনা মহামারিতে লকডাউনের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকায় কৃষি শ্রমিক সংকটে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। এজন্য সময় পেরিয়ে গেলেও পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেনা তারা। এ অবস্থায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের নেতামর্কীরা। ২৫ এপ্রিল সকাল ১১টায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুক করিম রানার নের্তৃত্বে দুর্গাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার কৃষক সিরাজ দৌলার ৩ বিঘা জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্রলীগের ৩০-৩৫জন নেতাকর্মী অংশ নেয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় চলতি বছর ১হাজার ৫শত ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার কৃষক চলতি বছর বোরো আবাদ করেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯শত ২০ মেট্রিকটন ধান। সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে দুর্গাপুর ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নে ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে
উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের বোরো চাষি আবুল হোসেন জানান, এক সময় দূর্গাপুর ইউনিয়নে বোরো চাষ হতো না বললে চলে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্বোধনের পর উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো চাষ হচ্ছে দূর্গাপুর ইউনিয়নে। তবে গত বছরের মতো চলতি বছরও লকডাউন থাকায় ধান কাটা ও নেয়ার শ্রমিক সংকটে পড়েছে চাষিরা। সময় চলে গেলেও ধান ঘরে তুলতে পারছে না তারা।
করেরহাট ইউনিয়নের বোরো চাষি আমজাদ হোসেন জানান, প্রত্যেক বছর দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রমিকরা মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে এসে থাকেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তারা আসতে না পারায় বিপাকে পড়েছে বোরো চাষিরা।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা বলেন, করোনা মহামারিতে কৃষকরা যখন তাদের পাকাধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় আছেন, তখন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ। আমরা কৃষক সিরাজ দৌলার তিন বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছি। এতে তার মুখে স্বস্তির হাসি দেখে সত্যিই আমাদের ভালো লেগেছে।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, লকডাউনের কারণে ধান কাটা ও পরিবহণের জন্য কৃষকরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সহযোগীতা করতে দূর্গাপুর ইউনিয়নে একটি হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে।