কর্ণফুলী দখলদারদের দমন করা হবে

নদী পরিদর্শনকালে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী

আনোয়ারা সংবাদদাতা »

‘বালুচর হচ্ছে নদীর জমি। আর নদী, খাল, বিল এসব গণঅধিকার সম্পত্তি। তাই নদীর জমি বিক্রি বা কাউকে লিজ দেওয়া যায় না। আর সরেজমিনে এসে এটা প্রতিয়মান হয় যে, কর্ণফুলী ড্রাই ডক নদীর জায়গায় অবস্থিত। আর নদীর জায়গা কোনো বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা যায় না। এটা ১ নম্বর খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা আছে। সুতরাং কর্ণফুলী ড্রাই ডককে এই জায়গা কারা দিলো কিভাবে দিলো তাদের আদৌ দেওয়ার সুযোগ আছে কি-না বিষয়টি তদারকি করে দেখা হবে।’

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কর্ণফুলী নদীর জলাধারের দখল, দূষণ, নাব্যতা স্থানীয় নদীসংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে সরেজমিন পরিদর্শন ও কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী (সরকারের সচিব) এ কথা বলেন।

এসময় নদীর বালুচরে গাছ কেটে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, বালুচরে বেড়ে ওঠা গাছও কেউ কাটতে পারে না এবং বন বিভাগও এটা কাটার অনুমতি দিতে পারে না।

নদীর অবৈধ দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটা কর্ণফুলী নদী। কিন্তু এখানে এখন মাছ বাজার এবং হাজারও অবৈধ স্থাপনা। কল্পলোক হাউসিং ও একনেকের যে প্রজেক্টটা দেখলাম। তারা রাজাখালী খালটাকে বন্ধ করে দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এটা হতে পারে না। কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল সরাতে, নদীকে অবমুক্ত করতে যা যা করা দরকার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তা তা করবে।

নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও ড্রেজিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্রেজিং করা হয় নদী রক্ষা করতে। নদী ভরাট করতে নয়। তাছাড়া কর্ণফুলী বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। এ নদীর বায়োডাইভারসিটি (জীববৈচিত্র্য) যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, বদলপুরা মৌজার ২৩৮ দাগে ১২.৫০ একর জমি রয়েছে। তারমধ্যে ভেজা অধিগ্রহণ করে কর্ণফুলী ড্রাইডককে লিস দিয়েছে ১১.০৬ একর, কেইপিজেড কে দেওয়া হয়েছে ১.৩৪ একর। ভেজা সব মিলিয়ে কর্ণফুলী ড্রাইডককে ২০.৯৮ একর জমি লিজ দিলেও ড্রাইডক অন্যান্য দাগে আরো ৯ একরের বেশি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আর বর্তমানে বনবিভাগ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অর্ধ কোটি টাকার বেশি মূল্যের গাছ কেটে ফেলেছে। রাতারাতি শতশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা এলাকার পরিবেশ হুমকিতে পড়বে বলে মনে করি।

এসময় সরেজমিনে উপস্থিত থেকে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, গাছ কেটে ফেলার জায়গাটা বেজাকে লিস দিয়েছি। তারা আমাদের না জানিয়ে অন্য একটি তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তি করে বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে গাছগুলো কর্তন করে ফেলছে। আসলে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে বেজার সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসময় অন্যদের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন, মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেনসহ কর্ণফুলী ড্রাই ডক এবং নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, রোববার সকাল থেকে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির পাশে কর্ণফুলী নদীর চরে ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বাগান স্কেভেটর দিয়ে ড্রাই ডক কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলেছে।