করোনাকালে পাহাড়ধসের নতুন আতঙ্ক

ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের আশংকায় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ বসতি এলাকায় বুধবার মাইকিং করা হয়-সুপ্রভাত

১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, পাহাড়ি এলাকায় নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের মাইকিং #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনার ঝুঁকির সময়ে নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পাহাড়ধস। বুধবার সকাল থেকে মৌসুমের স্বাভাবিক ধীরলয়ের বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সোচ্চার জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটরা বুধবার নগরীর বায়েজীদ, আকবরশাহ, জালালাবাদ, ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়ক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এলাকাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করেছেন। একইসাথে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মাইকিং প্রসঙ্গে পাহাড় ধস ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যদিও মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টি এবং বৃষ্টির তীব্রতা কম। তারপরও আমরা সতর্ক। বুধবার সকাল থেকে আমাদের টিম বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেছে। আমাদের ঘোষিত ১৭টি ঝুকিপূর্ণ পাহাড় ছাড়াও সাধারণ পাহাড়ি এলাকায়ও আমাদের টিম মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়েছে। একইসাথে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়লে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কিন্তু করোনার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের বিন্যাস কিভাবে করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অন্যান্য বছর সাত থেকে আটটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখলেও এবার তা ১৯টি করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে বজায় রাখার জন্য চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও কাট্টলী এলাকায় এসব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসাথে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে মানুষ খাদ্য সহায়তা পায় সেই প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
আকবরশাহ এবং ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে মাইকিং অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিডিএ’র এই রোডটিকে কেন্দ্র করে উভয় দিকে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা হয়েছে। এখন প্রবল বৃষ্টিতে এসব পাহাড় ধসে পড়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এজন্য আমরা এখানকার লোকদের সরে যেতে বলেছি। যদি না সরে তাহলে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
এদিকে চট্টগ্রামে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন ১২৭ জনের মৃত্যুর পর শক্তিশালী পাহাড়ধস ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনন করে এবার ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করে। এসব পাহাড় থেকে বসতিদের সরিয়ে আনতে এই কমিটি সোচ্চার থাকে। একইসাথে পাহাড়ে যাতে কেউ বসবাস করতে না পারে সেজন্য পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যান সংযোগের লাইন বিচ্ছিন্ন করনের নোটিশও রয়েছে। তারপরও এলাকাগুলোতে মানুষের বসবাস রয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় লালখান বাজারের মতিঝর্না, টাইগার পাস, আকবরশাহ রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটি এলাকার পাহাড়, বিশ্বকলোনীর পাহাড়, কৈবল্যধাম কনকর্ডের পাহাড়, জঙ্গল ছলিমপুর, জঙ্গল লতিফপুর, বায়েজীদ প্রভৃতি এলাকায় মানুষের বসতি বেশি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকায় সবসময় অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে সাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। আর ভারী বর্ষণ হলে বালি মাটির পাহাড়ের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকে। সেজন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বুধবার দিনভর রিম ঝিম বৃষ্টি হলেও মুষলধারে বৃষ্টি হয়নি। তবে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০০ মিলিমিটার।