আমাদের শহিদমিনার কবে হবে

২৮১ কোটি টাকা ব্যয় করার পরেও এ বছর নগরবাসী শহিদমিনারে এসে বায়ান্নের শহিদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারেনি। গত কয়েকবছরের মতো এবারও মিউনিসিপ্যাল স্কুলের অস্থায়ী শহিদমিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে হয়েছে। কারণ এত অর্থব্যয় ও সময়ক্ষেপণের পর যা নির্মিত হয়েছে তাতে হতবাক নগরবাসী।
১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের কিছু সংস্কৃতি ও সমাজসেবীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় শতাব্দীকাল ধরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন হয়েছে এখানে। ১৯৫৯ সালে সরকার মুসলিম ইনস্টিটিউট অধ্যাদেশের মাধ্যমে হলটি অধিগ্রহণ করে। ১৯৬৩ সালে ইনস্টিটিউটে স্বল্প পরিসরে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পাশেই কেসিদে সড়কে ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদমিনার নির্মিত হয়। শহিদমিনারটির তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল শুরুতে প্রায় ২৩২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামবাসীর শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। তবে শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
নতুন শহিদমিনারের সমস্যা হলো এটা নিচে থেকে দেখা যায় না। আগের মিনারটি যেমন দেখা যেত, অনেক দূর থেকেও দেখা যেত। একটি পনেরো তলা ও আরেকটি নয়তলা ভবনের বিপরীতে এটাকে একটি শহিদমিনারের বনসাই বলে মনে হচ্ছে। এই শহিদমিনারে যেতে হলে অন্তত তিনতলা সমান সিঁড়ি অতিক্রম করতে হবে। অথচ চট্টগ্রামের মানুষ ভেবেছিল মুসলিম হল থেকে শহিদমিনার পর্যন্ত পুরো জায়গাটিই সমতলে একীভূত হয়ে যাবে। কিন্তু এখন সেখানে একটি সুড়ঙ্গ হয়েছে। যেখানে দিনের বেলা যেতেও ভয় লাগার কথা।
মোট কথা কমপ্লেক্স হিসেবে সব ঠিক আছে কিন্তু জাতির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক, বাঙালির ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহিদমিনারকে দৃশ্যমান করতে হবে। আরও আরও উচ্চতায় তার অভিষেক হতে হবে যা দেখে ভক্তি ও শ্রদ্ধায় সবাই অবনত হবে।
এখন যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধান করতে গিয়ে নতুন করে আরেকটি জটিলতা সৃষ্টি করা যাবে না। কী করতে হবে, কী করলে নগরবাসী সন্তুষ্ট হবে তার পথ বের করতে হবে। তবেই হয়ত সেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুল দিতে যাবে।