আদা-রসুনের গুদাম খালি!

নিজস্ব প্রতিবেদক »

দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আদা ও রসুনের বাজার অস্থির। এলসি না খোলায় আমদানি কমেছে ব্যাপকহারে। কয়েকটি আড়তে কিছু আমদানিকৃত আদা-রসুন দেখা গেলেও প্রায় দোকানের গুদাম খালি পড়ে আছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে রমজানে দাম আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বুধবার বিকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, রসুনের আড়তগুলোতে দেশীয় রসুনের আংশিক যোগান থাকলেও আমদানিকৃত চায়না, ভারত (চেন্নাই) ও মায়ানমারের রসুন তেমন নেই। আমদানিকৃত রসুন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে না আসার কারণে আড়তদাররা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ আদা-রসুন ব্যবসা বন্ধ রেখে অন্য পণ্য গুদামে রেখেছেন। তবে আদা-রসুনের প্রায় গুদাম খালি পড়ে আছে।

এদিকে আমদানিকৃত আদা ও রসুনের বাজার সংকটের কারণে দেশীয় ও মায়ানমারের আদা-রসুনের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গতকাল খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে ৭ ঘণ্টার ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল আড়তে চায়নার আদার সকালে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা এবং বিকালে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় রসুন বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং আদা (দেশীয়) বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ও মায়ানমার ৭৫ টাকা এবং কেরালা ১০৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া আড়তে চায়নার আদা ১৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে তা ২০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তদাররা বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের আদা ও রসুনের বাজার আমদানিনির্ভর। ৯৫ শতাংশ বাজারই নিয়ন্ত্রণ করেন চীনের সরবরাহকারীরা। এর বাইরে কিছু মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি হয়। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ঋণপত্র খুলতে না পারায় আমদানি নির্ভর এ দুইটি পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে এক মাসের ব্যবধানে আদা ও রসুনের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি আদা ও রসুন ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে চীনের আদা বাজারে নেই। আপনারা পুরো মার্কেট ঘুরে দেখুন। কয়েকটি আড়ত ছাড়া সব আদা ও রসুনের আড়ত খালি। আড়তে আজকে (গতকাল) বাজারে চায়না আদা কেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় কেরালার আদার কেজি ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। প্রতি কেজি চীনা রসুনের পাইকারি দাম ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, ভারতীয় রসুন ৭৫ টাকা এবং দেশীয় রসুন ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

খাতুনগঞ্জের আল হাকিম বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মো. সায়েম বলেন, ‘এলসি জটিলতা এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। কয়েকজন ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারলেও প্রায় ব্যবসায়ী পারেনি। সামনে রমজান, এলসি খুলতে না পারলে বিদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আদা-রসুন আমদানি করতে পারবে না। এতে বাজার আদা-রসুনের দাম আরও বেড়ে যাবে।’

মিতালী ট্রেডার্সের মালিক হারুনুর রশীদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কিছু ব্যাংক এলসি দিলেও সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছেন বড় আমদানিকারকরা। রমজানের আগে এলসি জটিলতা স্বাভাবিক না হলে আদা-রসুনসহ মসলাজাত পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যবসায়ীরা চার-পাঁচ কন্টেইনার আদা-রসুন আমদানি করবে তারা এলসি খুলতে পারছে না। যারা বড় আমদানিকারক, তারাই এলসি খুলতে পারছেন। এখন আমি মনে করি ছোট আমদানিকারকদেরও এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির (কাঁচা মসলা পণ্য মার্কেট) সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘দুদিন ধরে বাজারে আদা ও রসুনের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে চায়নার আদা ও রসুন তেমন নেই। অনেক আড়তদার অলস সময় কাটাচ্ছেন। গত কয়েকদিন কিছু ব্যবসায়ী এলসি করতে পারলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ডলার সংকট ও এলসি (দরপত্র) জটিলতা এখন দেশের ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন মনে করি। দেশের ব্যবসায়ীরা যদি পণ্য আমদানি করতে না পারে তাহলে রমজানে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা নানা সংকটে পড়ে যাবেন। সরকারি বা বেসরকারিভাবে যেভাবে হোক দেশে পণ্য আসতে হবে।’

অন্যদিকে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ চাষের ফলন হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর এখনো নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না বলে জানান চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই পেঁয়াজ আড়তদার ফোরকান ট্রের্ডাসের মালিক মো. ফোরকান বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ খুবই ভালো। আমাদের দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠছে, সেই সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহও ভালো। তাই পেঁয়াজের বাজার বাড়বে না। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৮ থেকে ৩৬ টাকা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর আদার চাহিদা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার টন। অন্যদিকে রসুনের ৯ লাখ মেট্রিক টন এবং পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদা উৎপাদন হয় তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে।