আগ্রাবাদে মারুফের আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশ দোষী!

এসআই হেলাল

এসআই হেলাল বরখাস্ত, ওসি সদীপ কুমারকে শোকজ#
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নগরের আগ্রাবাদে দশম শ্রেণির ছাত্র সাদমান ইসলাম মারুফের আত্মহত্যার ঘটনায় ডবলমুরিং থানার অভিযুক্ত এস আই হেলাল খানের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল সোমবার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
কমিটির প্রধান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ মনজুর মোর্শেদ নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবর রহমানের কাছে গতকাল সোমবার ১৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন জমা দেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ডবলমুরিং জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শ্রীমা চাকমা ও নগর বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনার নুরুল আফসার ভূইয়া।
তদন্ত প্রতিবেদনে মারুফের আত্মহত্যার ঘটনায় এসআই হেলাল খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি অধীনস্থ পুলিশ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় ওসি সদীপ কুমার দাশকে শোকজ করারও সুপারিশ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি
গতকাল সুপ্রভাতকে নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন কমিটির প্রধান ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা মনজুর মোর্শেদ।
সিএমপি সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত এস আই হেলালসহ মোট ৩২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার দিন (১৬ জুলাই) এস আই হেলাল খান ওসি সদীপ কুমার দাসকে না জানিয়ে সাদা পোশাকে মারুফের বাসায় অভিযানে যান। এ কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়।
অধীনস্থ পুলিশ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ওসি সদীপ দাশকে লিখিত জবাবের দেওয়ার পাশাপাশি শোকজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ জুলাই রাতে মারুফের আত্মহত্যার ঘটনার পর ডবলমুরিং জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শ্রীমা চাকমা ও ডবলমুরিং থানার ওসি (তদন্ত) জহির হোসেনের নেতৃত্ব একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুই দিন পর ডিবির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদের নেতৃত্বে নতুন করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় আগ্রাবাদ বাদামতলি মসজিদ এলাকায় এস আই হেলাল খানসহ আরও দুই পুলিশ সদস্য মারুফের বাসায় কথিত অভিযানে গিয়ে তার মা ও বোনকে লাঞ্চিত করেন। শুধু তাই নয়, মারুফকে গ্রেফতার করা হবে না বলে জানিয়ে তার মায়ের কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবিও করেন এস আই হেলাল খান। টাকা দিতে অপারগতা জানালে মারুফের মা ও বোনকে মারধর করেন এস আই হেলাল। মা ও বোনের এমন অপমান সইতে না পেরে ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন দশম শ্রেণির ছাত্র সাদমান ইসলাম মারুফ।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১৬ জুলাই বিকেলে এসআই হেলাল খানের দুইজন সোর্সের হাতে বিনা অপরাধে মারধরের শিকার হয় মারুফ। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযানের নামে মারুফসহ তার মা বোনকে মারধর করেন হেলাল। এ সময় মারুফ ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে সক্ষম হলেও তার মা বোনকে গাড়ি তুলে নেন এসআই হেলাল খান। ঘটনার পর এসআই হেলাল খানকে ক্লোজড করেছিল নগর পুলিশ।
এদিকে সোমবার রাত ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হক বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে এসআই হেলাল এককভাবে ঘটনার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি সদীপ কুমার দাশকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে।’