অর্থাভাবে হচ্ছে না সড়ক সংস্কার : মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার

এবারের বর্ষায় শহরের ১৭০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে সড়কের বিটুমিন ও ইট-কংক্রিট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পূর্বে হওয়া গর্তগুলোর আকৃতিও বড় হচ্ছে দিন দিন। তার ওপর বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি সড়কের বেহাল দশাকে আরও বেশি শোচনীয় করে তুলছে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। পাশাপাশি পরিবহন মালিকরা দাবি করছেন, সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়ক নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে তৈরি মিক্সার দিয়ে সংস্কার করা হয়। এটাকে সংস্থাটির ভাষায় প্যাচওয়ার্ক বলে। গত ২৬ আগস্ট প্যাচওয়ার্কের কাজ শুরুও হয়েছিল। তবে এরপরও কয়েক দফা হওয়া বৃষ্টিতে সংস্কার হওয়া অংশসহ নতুন নতুন জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। আবার আর্থিক সংকটের কারণে অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে ব্যবহৃত পণ্য ইট, বালি, সিমেন্ট, বিটুমিন কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে নগরে ক্ষতি হওয়া সড়কগুলো প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কারে প্রয়োজন ৭০ কোটি টাকা। আর্থিক সংকটে থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পক্ষে এ অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই সংস্থাটি দ্বারস্থ হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের। দুই দফায় ৯০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও চেয়েছে। অথচ চসিকের চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব তহবিল থেকে সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পাশাপাশি সড়ক সংস্কারের জন্য বিটুমিন, পাথর, ইট, বালি ও খোয়া এবং রড সিমেন্ট ক্রয়ে বরাদ্দ আছে আরো ৩৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় এবং জাইকাভুক্ত চলমান আরও চারটি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ রাখার পরও আর্থিক সংকটের কারণ হিসেবে জানা গেছে, রাজস্ব তহবিলের আওতায় যে বরাদ্দ তা বাস্তবায়ন নির্ভর করে রাজস্ব শাখার আয়ের ওপর। করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে এ খাতে কাক্সিক্ষত আয় হচ্ছে না। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজস্ব খাতে আয় হয়েছে মাত্র ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আবার এ আয় থেকেই প্রতি মাসে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হিসেবে। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ অন্যান্য খাতেও কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও রাজস্ব তহবিল থেকে সড়ক সংস্কার করা এ মুহূর্তে সংস্থাটির পক্ষে কঠিন। এছাড়া এডিপিভুক্ত যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর বিপরীতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। গত অর্থবছরের শেষের দিকে কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন লটে ঠিকাদার নিয়োগও করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করবেন তারা। তবে চলতি অর্থবছরের জন্য প্রকল্পগুলোর বিপরীতে বরাদ্দ হওয়া অর্থ এখনো মন্ত্রণালয় ছাড় করেনি। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দ না পেলে বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়কগুলো সংস্কার করতে বেকায়দায় পড়তে হবে চসিককে।
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দুই দফায় চিঠি দিয়ে সড়ক সংস্কারের জন্য ৯০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও চান। সর্বশেষ গত রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপানুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে ৭০ কোটি টাকা চেয়েছেন। আমরা আশা করি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নব নিযুক্ত সিটি প্রশাসকের অনুরোধে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম নগরবাসীর দুঃখ লাঘবে সচেষ্ট হবে।