অবশেষে জয়ের দেখা

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা টিকে রইল বাংলাদেশের

সুপ্রভাত ডেস্ক »

‘এল ক্লাসিকো’ নাকি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই? বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে নজর রাখলে এমন জিজ্ঞাসা মনের কোণে উঁকি দিতেই পারে। গত কয়েক বছর ধরে দুই দলের মাঠের লড়াই অনেকটা এমন দ্বৈরথেই রূপ নিয়েছে। গতকাল যাতে ঘি ঢেলেছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ‘টাইমড আউট’। জবাবে ম্যাচজুড়ে টাইগার ব্যাটারদের একের পর এক স্লেজিং করেন লঙ্কানরা। ক্ষেপে যাওয়া সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তও পেয়ে যান ফর্মে ফেরার রসদ। তাদের দুজনের ১৬৯ রানের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ ৩ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে।

উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছানোর জন্য পুরো আয়োজন প্রস্তুত করেছিলেন সাকিব-ম্যাথিউসরা। যে ম্যাথিউসের সঙ্গে এতকিছু, তার বলেই উইকেট দিয়ে বিদায় নেন সেঞ্চুরির পথে থাকা সাকিব-শান্ত দুজনেই। তাদের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম ও ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউটে ম্যাচ আরও নাটকীয় হয়ে ওঠে। মনের গহীনে শঙ্কাও জেগে ওঠে বলে এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ খুইয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হতে দেননি তাওহীদ হৃদয়রা। ক্রিজে নামার পর তাকে উদ্দেশ্য করে চারিথ আসালাঙ্কাকে কিছু বলতে দেখা যায়। তার আগে ম্যাচ জয়ের মূল ভিতটা গড়ে দিয়েছেন সাকিব ও শান্ত। ৪১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা। সেখান থেকে টুর্নামেন্টজুড়ে রানের জন্য ভুগতে থাকা সাকিব-শান্ত মিলে কী স্বস্তির ইনিংসই না খেললেন! শান্ত করেছেন ৯০ আর ৮২ রান এসেছে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৪১.১ ওভারেই লঙ্কানদের দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্য পেরিয়েছে বাংলাদেশ।

এ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় শ্রীলঙ্কাকে টপকে সাতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পেতে হলে থাকতে হবে শীর্ষ আটের মধ্যে। দুই দলেরই বাকি একটি করে ম্যাচ। নেট রান রেটে শ্রীলঙ্কাকে টপকে যাওয়ার ব্যাপার ছিল, তাতে সফল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের পর ম্যাচজুড়ে আলোচনার বিষয় ছিল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড-আউট।

লঙ্কানদের রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ওভারটা দেখেশুনেই খেলেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। শেষ দুই বলে তানজিদ দুটি চার মারেন। দ্বিতীয় ওভারে এক চারের সঙ্গে আসে তিনটি সিঙ্গেল রান। ভালোই আগাচ্ছিল ইনিংস, এর মাঝেই পরের ওভারের প্রথম বলে দিলশান মাদুশঙ্কাকে মারতে গিয়ে ওপরে ক্যাচ তুলে দেন তামিম। টানা ব্যাট হাতে ব্যর্থ তামিম আজও ফিরেছেন ৫ বলে ৯ রান করে। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরেন লিটনও। ৬ রানের মাথায় তিনি জীবন পেয়েছিলেন। পরে কাসুন রাজিথার ওপর চড়াও হয়ে পরপর ২ বলে ২টি ছক্কা মারার পরই পায়ে টান পড়ে তার। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে মাদুশঙ্কার এক ইয়র্কারে এলবডব্লিউ হন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ২৩ বলে ২২ রান করেন। খবর ঢাকাপোস্ট।

দুই ওপেনার ৪১ রানে ফিরলেও দলকে টেনে নিয়েছেন শান্ত ও সাকিব জুটি। যা শেষ পর্যন্ত ১৬৯ গিয়ে ঠেকে। দিল্লিতে শান্ত ও সাকিবের দারুণ ব্যাটিং দেখে সমর্থকদের আফসোস বরং বাড়তে পারে আরও! বড্ড দেরি হয়ে গেল যে। আসরজুড়ে রানখরায় ভুগেছে টাইগার ব্যাটাররা। দারুণ বোঝাপড়ায় তারা সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন। ৩২তম ওভারে ম্যাথিউসের থেমে আসা বলে লিডিং-এজে মিড অফে আসালাঙ্কার হাতে ধরা পড়েন সাকিব। ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ বলে ৮২ রানে টাইগার অধিনায়ক থামেন।

ব্যাক্তিগত ৮২ রানের মাথায় সাকিবকে ফেরানোর পর ৯০ রানের মাথায় সেই ম্যাথিউসেরই শিকার হলেন শান্ত। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন শান্ত। ১২ চারে ১০১ বলে তিনি খেলেছেন ৯০ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে স্বস্তি উবে যায় বাংলাদেশের। পরপর উইকেট দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ১০ ও রিয়াদ করেন ২২ রান।

শেষদিকে নাটকীয়তা তৈরি হতে পারত আরও। তাওহীয় হৃদয় ক্রিজে আসতেই তাকে স্লেজিং করতে থাকেন আসালাঙ্কা। যার জবাব তিনি পরপর দুই ওভারে লং-অন ও মিড-অনে দুটি ছয় হাঁকিয়ে দেন। তার ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়।

লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা। এছাড়া দুটি করে শিকার করেন ম্যাথিউস ও মাহেশ থিকশানা।