অনুবাদ বইয়ে আগ্রহ পাঠকের

চট্টগ্রাম বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

যুগ-যুগ ধরে মানুষ নিজস্ব ভাষার বাইরের সমাজ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আর এ আগ্রহ মেটানোর অন্যতম মাধ্যম অনুবাদকর্ম বা অনুবাদগ্রন্থ। সেকালের পাশাপাশি একালেও দেশি লেখকের পাশাপাশি বিদেশি লেখকের বইও বাঙালি পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই এবার অমর একুশে বইমলায়ও অনেক অনুবাদ বই বের হয়েছে।

চট্টগ্রাম আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরের বইমেলায় আসা অনুবাদ বইগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে তরুণ অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক রিয়াজ মোরশেদ সায়েমের বেশ কয়েকটি বই। তাঁর অনূদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান লেখক অস্টিন ক্লেওন-এর ‘স্টিললাইক অ্যান আর্টিস্ট’, ভিয়েতনামি লেখক থিক নাথ হান-এর ‘হাউ টু লাভ’ ও ‘হাউ টু ওয়াক’, ভিক্টর ই. ফ্রাংকল-এর ‘ম্যানস সার্চ ফর মিনিং’, এরিক জর্জেনসন-এর ‘দ্য আরমানাক অব নাভাল রাভিকান্ত’, ‘মুরাকামির হাফ ডজন গল্প’, ভারতীয় লেখক আবু তারিক হিজাজির ‘ইসলামি ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র’, লেইল লোনডেস-এর ‘হাউ টু টক টু অ্যানিওয়ান’, জেনিফার ম্যাককার্টনির ‘দ্য লিটল বুক অব স্লথ ফিলোজফি’। এছাড়া ইফতেখার আবির অনূদিত থিক নাথ হান-এর ‘হাউ টু রিল্যাক্স’ও রয়েছে। উল্লিখিত বইগুলো অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে।

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবুল বাশার অনূদিত ফ্লোরিয়ান ফ্রেয়িস্টেটার-এর ‘স্টিফেন হকিং ও তাঁর আবিষ্কৃত বিজ্ঞান’, আব্দুল্ল্যাহ আদিল মাহমুদ অনূদিত মালবা তাহান-এর ‘দ্য ম্যান হু কাউন্টেড’, উচ্ছ্বাস তৌফিক অনূদিত পিটার অ্যাটকিনস-এর ‘রসায়ন সহজপাঠ’।

কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে জি এইচ হাবীব অনূদিত তরে ইয়নসন-এর ‘লাতিনভাষার কথা’, আফসানা বেগম অনূদিত আইজাক আসিমভ-এর ‘রোমান সাম্রাজ্য’ ও ‘রোমান প্রজাতন্ত্র’, আনিসুজ জামান অনূদিত আনহেলেস মাস্ত্রেত্তা-এর ‘পরানটাকে উপরে নাও’, জিয়া হাশান অনূদিত এলি উইজেল-এর ‘সেই রাত’, অসিতবরণ ঘোষ অনূদিত মারিয়া মন্তেসরীর ‘দ্য সিক্রেট অব চাউল্ডহুড’।

এবারের বইমেলায় আরও আছে বাতিঘর থেকে প্রকাশিত আলভী আহমেদ অনূদিত ‘হারুকি মুরাকামি (সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা ও স্মৃতিকথা)’, মোস্তাক শরীফ অনূদিত অ্যালিস ওয়াকার-এর ‘দ্য কালার পার্পল’, অরুণ সোম অনূদিত ভøাদিমির বগমোলভ-এর ‘নাম ছিল তার ইভান’, জ্যোতির্ময় নন্দী অনূদিত পাওলো কোয়েলহোর ‘ইলেভেন মিনিটস’, জামাল নাসের অনূদিত জন ক্রাকাওয়ার-এর ‘ইনটু থিন এয়ার’, দিলওয়ার হাসান অনূদিত উমা ত্রিলোক-এর ‘অমৃত-ইমরোজ’।

এছাড়াও ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে মাহমুদ মেনন অনূদিত জর্জ অরওয়েল-এর ‘১৯৮৪’ এবং অনন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে অসীম দত্ত অনূদিত ডার্সি কোটস-এর ‘সিক্রেটস্ ইন দ্য ডার্ক’ ও ‘দ্য হাউজ নেক্সট ডোর’।

চট্টগ্রামের বইমেলায় বিভিন্ন স্টল মালিক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের লেখকের বইয়ের পাশাপাশি অনুবাদের বইয়ের চাহিদাও ভালো। কোনো কোনো স্টলে অনুবাদের বইগুলো সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকার শীর্ষে আছে বলেও জানান তারা।

একুশে ফেব্রুয়ারি (গত মঙ্গলবার) বইমেলা ঘুরে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে পাঠকের আগ্রহের বিষয়টি চোখে পড়ে। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে একটি অনুবাদের বই কিনে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় কলেজপড়ুয়া পার্থকে। কী বই কিনলেনÑ জানতে চাইলে তিনি হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বইটি বের করে বললেন, রিয়াজ মোরশেদ সায়মের অনুবাদে ‘থিক নাথ হান-এর হাউ টু লাভ কিনেছি। অনুবাদ বই আগেও পড়েছি, এখন দেখেশুনে নিতে হয়। কারণ আগে কিছু অনুবাদ পড়ে খুব বেশি ভালো লাগেনি। তাই এবার দেখে ও কিছু অংশ পড়েই নিচ্ছি। আরেকটি বই নেব, সেটি হলো অস্টিন ক্লেওন-এর ‘স্টিললাইফ অ্যান আর্টিস্ট’।’

কথা হয় অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ও প্রকাশক আনিস সুজনের সাথে। তিনি বলেন, ‘পাঠকের মাঝে অনুবাদগ্রন্থের চাহিদা অন্যান্য বই থেকেও বেশি দেখা যাচ্ছে এবার। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে এবার অনেক অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি অনুবাদই ঝরঝরে। অনূদিত বইয়ের বিক্রিও ভালো। পাঠক কিন্তু দেখে-পড়েই কিনছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রিভিও দিচ্ছেন- এটি দেখে ভালো লাগে।’

অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন স্টলের সামনে অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত দেখা গেছে অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক রিয়াজ মোরশেদ সায়েমকে। এ সময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলায় প্রচুর অনুবাদের বই বের হয়। এসব বইয়ের চাহিদাও কম না। মানুষ আসলে বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানতে চায়। বিগত বছর অনূদিত বইয়ে সাড়া পেয়েছি, এবারও আমার কিছু অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পাঠক আমার অনুবাদ বই পড়ে রিভিউও দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে আরও বেশি করে অনুবাদে উৎসাহ পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।’

মেলায় অনেক অনূদিত বই আসে, পাঠক কীভাবে ভালো অনুবাদের বই চিনবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঠক তো আর সব অনুবাদ পড়বেন না। তাদের নিজস্ব পছন্দের লেখক আছে। এছাড়া দেখা গেছে, অনুবাদ বই দেখে ও কিছু অংশ পড়েই কিনছেন।’

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলের বিপণন কর্মকর্তা হামিদ বলেন, ‌‌‘দেশি লেখকদের পাশাপাশি অনূদিত বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। সব মিলে মোটামুটি ভালো চাহিদা রয়েছে অনূদিত বইয়ের।’

কথাপ্রকাশ-এর স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজু বলেন, ‘অন্যান্য বইয়ের মতো পাঠকেরা খুঁজছেন অনুবাদগ্রন্থও। এবারের মেলায় অনেকদিন দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অনুবাদ বই।’ কোন্ কোন্ বয়সী পাঠক অনূদিত বই বেশি কিনছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাই এসব বইয়ের বড় ক্রেতা। তাছাড়া অনেক বয়স্কও খোঁজ নিচ্ছেন অনুবাদ বইয়ের।’ অনন্যপ্রকাশ-এর স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এবার অনন্যপ্রকাশ থেকে অসীম দত্ত অনূদিতসহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

পাঠকের মধ্যে অনেককেই দেখা গেল স্টলে ঢুকেই অনুবাদ বই খুঁজছেন। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।