হালদা নদীর তীরে ধ্বংস করা ইটভাটা পুনরায় চালু

আরো ২টি ইটের ভাটাসহ হালদা পাড়ে তিনটি ইটের ভাটা চলছে পুরোদমে

 

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাউজান :

দেশের কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছিল দুটি ইটভাটা। তবে উচ্ছেদের পরপরই সে দুটি ইটভাটা আবারও চালু হয়েছে। নদী সুরক্ষা আইনে হালদা পারের একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ইটভাটা গড়ে তোলা নিষিদ্ধ হলেও ইটভাটা দুটি তা মানেনি। বর্তমানে মোট তিনটি ইটভাটা হালদা পারে ইট তৈরি করছে। এ কারণে হালদার মা মাছ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

গত ১১  মার্চ চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামীপাড়া গ্রামে হালদার পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা ‘এ আলী’ নামের একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। কয়েক দিন যেতে না যেতেই এই ইটভাটা আবারও চালু হয়েছে। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে নদী ও পরিবেশ দূষণকারী ড্রাম চিমনি। যার উচ্চতা মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট।

এ ছাড়া হালদাপারের একই উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখিল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হালদার পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা শান্তি ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু সেটিও সপ্তাহ যেতে না যেতে আবার চালু হয়। ওই ইটভাটায় পোড়ানোর কার্যক্রম এখনো চলছে।

এ ছাড়া উড়কিরচর ইউনিয়নের মইশকরম গ্রামে হালদার তীর ঘেঁষে সফি অটো ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটা রয়েছে। যেটিতে অভিযান চালানো হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হালদাপারে ফের চালু করা এ আলী ইটভাটার ইট উৎপাদন অব্যাহত আছে।

এটির মালিক জাহেদ চৌধুরীর ভাই রাশেদ চৌধুরীকে ফোন করে  পুনরায় ইটের  ভাটা চালু করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাময়িক চালু করা হয়েছে। ইট পোড়ানো শেষ হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

হালদা পারে অবৈধ ইটভাটা ফের চালু করা প্রসঙ্গে নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া  বলেন, নদী সুরক্ষা আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, হালদাপারের একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অর্থাৎ পাড়ের খুব কাছাকাছি ইটভাটা করা যাবে না। তিনটি ইটভাটাই হালদা পারের একেবারের কাছাকাছি ও নদী ভরাট করে হয়েছে।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদা নদী এখন বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ। দেশের জাতীয় সম্পদ। এটি রক্ষা করা প্রশাসনের পাশাপাশি সবার দায়িত্ব। এই নদীর পাড়েই দখল দূষণ করে ইটভাটা চালানো যাবে না। হাইকোর্টে নির্দেশনা ও নদী দখল দূষণ থেকে বাঁচাতে এখানে দুটি ইটভাটা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ফের চালু করে থাকলে আবার ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন। করোনার প্রার্দুভাব এর কারণে লকডাউন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ব্যস্ত থাকায় অভিযান করতে বিলম্ব হচ্ছে ।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক জমির উদ্দিন  বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফের কেউ চালু করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।