সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই
রাজু কুমার দে, মিরসরাই :
মিরসরাইয়ে বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। অযতœ অবহেলায় চুরি হয়ে যাচ্ছে লোহার গ্রিল। একাধিকবার চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের তালিাকা পাঠিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা মিরসরাই উপজেলায়। মিরসরাইয়ের একাধিক মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে মিরসরাইয়ে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করে হত্যাযজ্ঞ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। হত্যাকান্ড শেষে নির্দিষ্ট কয়েকস্থানে লাশগুলো ফেলে দেয়। এক একটি কবরে ১৫-২০টি লাশ কবর দেয়া হয়। ওইসব স্থানগুলোকে চিহিৃত করে পরবর্তীতে বধ্যভূমি হিসেবে ঘোষনা করে সরকার। জানা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের লোহারপুল, সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর পাড়, হিঙ্গুলী সেতু, অছিমিয়ারপুল, হিঙ্গুলী কোটের পাড়, ছুটিখাঁ দিঘীর পাড়, মাস্তাননগর হাসপাতাল, মিরসরাই রেলস্টেশন রোডে লোহারপুল, ঝুলনপুলসহ বিভিন্ন স্থানে নিরীহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। উপজেলার অন্যতম বৃহত্তম বধ্যভূমি হচ্ছে মিরসরাই রেল স্টেশন রোডের লোহারপুল এলাকা। এখানে এক সাথে শতাধিক লোককে কবর দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ১৯৭২ সালের ৩ মে উপজেলার পশ্চিম হিঙ্গুলী জঙ্গল ঘেরা একটি পুকুর থেকে ৮৩টি নরকঙ্কাল পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হতভাগ্যদের ওই পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। জানা গেছে, মুক্তিবাহিনী হিঙ্গুলীতে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত রেল সেতু ধবংস করলে পাকবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার একটি গ্রাম থেকে ২৪০ লোককে ধরে এনে এখানে হত্যা করে। সেতুটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। এদিকে ২০১১ সালে মিরসরাই রেল স্টেশন রোডে অবস্থিত বধ্যভূমিটির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। কিন্তু অযতœ অবহেলায় বর্তমানে এটি মাদকসক্তদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের লোহার গ্রিল কেটে নিয়ে গেছে চোরের দল। অন্যদিকে অছিমিয়ার পুল সংগ্লন্ন বধ্যভূমিটি চারলেন প্রকল্পে বিলীন হয়ে গেছে। চারলেনের কাজ শুরু করার সময় বধ্যভূমিটি আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান তৎকালিন উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু পরে তা সংরক্ষণ করা হয়নি। শুভপুর ব্রিজের এখনো লেগে আছে গুলির দাগ। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা মিরসরাইয়ে। কিন্তু এখানকার বধ্যভূমিগুলো এখনো অরক্ষিত।মিরসরাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবির আহম্মদ জানান, মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের জন্য একটি তালিকা একাধিকবার জেলা পরিষদে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখানো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।