জেলের দুর্ভোগ স্লুইস গেইট

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন

রাজু কুমার দে, মিরসরাই :

মিরসরাইয়ের চারটি জেলে পাড়ার তিন শতাধিক জেলে বংশ পরম্পরায় বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে ওই মাছ সাহেরখালী খাল দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পাড়ে নিয়ে আসতো। কিন্ত তাদের বহু বছরের সেই চলাচলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নির্মিত নতুন সাহেরখালী স্লুইস গেইট। স্লুইস গেইট নির্মাণ করে দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়ায় সাহেরখালী খালে পানি ঢুকছে না। ফলে খালটি শুকিয়ে গেছে। খাল শুকিয়ে যাওয়ায় জেলেরা সাগর থেকে মাছ আহরণ করে তিন কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে পাড়ে আসছে। পাড়ে পৌছার আগেই সিংহভাগ মাছ পঁচে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান চেয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছে জেলেরা।জেলেরা জানায়, উপজেলার সাহেরখালী জলদাস পাড়া, মায়ানী ইউনিয়নের জয়নগর, মির্জানগর এলাকার প্রায় তিন শতাধিক জেলে যুগ যুগ ধরে প্রতিদিন সাহেরখালী খাল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সাহেরখালী বেড়িবাঁধে ফিরে এসে মাছগুলো বিক্রি করেন। কিন্তু গত ৫-৬ মাস ধরে সাহেরখালী খাল শুকিয়ে যাওয়ার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আসা করতে জেলেদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নির্মিত নতুন সাহেরখালী স্লুইস গেইটের নিচের দিকের সব কয়টি দরজা (স্লাব গেইট) বন্ধ করে দেয়ায় খালে পানি ঢুকছে না। ফলে সাগর থেকে মাছ ধরে তিন কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে পাড়ের আসার আগে মাছগুলো পঁচে যাচেছ। মাছ পঁচে যাওয়া দুর্ভোগ ও লোকাসান গুনতে হচ্ছে দরিদ্র জেলেদের। সরেজমিনে দেখা যায়, সাহরেখালী পুরাতন বেড়িবাঁধ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি প্রায় শুকিয়ে গেছে। জেলেরা কেউ পায়ে হেঁটে মাছ শিকারে সাগরের দিকে যাচ্ছে আবার কেউ রাতে শিকার করা মাছ কাঁধে বহন করে বিক্রির জন্য বেড়িবাঁধ এলাকা নিয়ে আসছে।

খালে পানি না থাকায় নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। জেলে প্রানহরি জলদাস, দীনেশ জলদাস ও কৃষ্ণ জলদাস জানান, সাহেরখালী স্লুইচ গেইটের নিচের দিকের ৮টি দরজার সব কয়টি বন্ধ থাকার কারণে সাহেরখালী খালে সাগরের জোয়ারের কোন পানি প্রবেশ করতে পারছেনা।

অন্যদিকে উপরের দিকে দরজা খোলা থাকায় খালের পানি ভাটার সময় সাগরে চলে যায়। যার ফলে খাল শুকিয়ে গেছে এবং জেলেদের কোন নৌকা খালে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। নৌকা চলাচল করতে না পারায় প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ কেউ কাঁদামাটিতে কাঁধে ভার নিয়ে পায়ে হেঁটে, পাড়ি দিচ্ছে। এতে অনেক মাছ সাগর পাড়েই পঁচে যায়। পূর্ব পুরুষের এই পেশা মনে হয় আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। স্লুইস গেইটের কয়েকটি দরজা খুলে দেয়া হলে জেলেদের দূর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হতো। সাহরেখালী খাল দিয়ে সাগর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে জেলেরা ৪-৫ লাখ টাকা মাছ শিকার করে।চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে মিরসরাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপ সহকারি প্রকৌশলী আনিস হায়দার খান এ সম্পর্কে বলেন, স্লুইস গেইটটি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় নিচের অংশের দরজা (স্লাব গেইট) খোলা যাচ্ছে না।

এছাড়া গেইট খোলার ক্যাবলও এখনো লাগানো হয়নি। ক্যাবল না লাগানো পর্যন্ত গেইট খোলা সম্ভব হবে না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন, জেলেদের দেয়া একটি আবেদন পেয়েছেন। সাগরের জোয়ারের পানি খালে প্রবেশ করিয়ে নৌকা চলাচল কতটুকু সম্ভব তা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।