চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হোক

রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রা শুরুর পর প্রথম ১৬ দিনে (২৩ এপ্রিল পর্যন্ত) কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের মোট আয় হয়েছিল ২৬ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ টাকা। তবে ঈদের পর ট্রেনটির শিডিউল বাড়ানো হলে প্রতিদিনের আয় আরও বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ ২৬ দিনে ট্রেনটি প্রায় ৫৩ লাখ টাকা আয় করেছে। বাড়তি চাহিদার কারণে এ ট্রেনে প্রতিদিনই দুই-তিনটি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এখন ১৮/৩৬ কোচের রেক দিয়ে ট্রেনটি পরিচালনা করা হলে তা আগামীতে স্বল্পদূরত্বে রেলের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয়ের ট্রেনে পরিণত হবে বলে মনে করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনের পর কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। তবে পথিমধ্যে স্টপেজ না রাখায় নানামুখী সমালোচনা ও দাবির মুখে সর্বশেষ ঈদুল ফিতরে রেলওয়ে একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করে। তবে কথা ছিল স্থানীয়দের জন্য দেয়া হবে আন্তঃনগর ট্রেন। লোকবল ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন ট্রেনটি চালু করতে না পারায় এবার বিশেষায়িত অস্থায়ী ট্রেনটিকেই স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্পেশাল ট্রেনটিকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে পরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের শিডিউলে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে কক্সবাজার স্টেশন পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছায়। পথিমধ্যে ষোলশহর স্টেশন, জান আলী হাট স্টেশন, পটিয়া, দোহাজারী, ডুলাহাজরা, সাতকানিয়া, চকরিয়া ও রামু স্টেশনে কয়েক মিনিট করে যাত্রাবিরতি দেয়।
বহুল প্রত্যাশিত এই রুট উদ্বোধনের পর ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। চট্টগ্রামে ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য কেবল ২০ মিনিটের বিরতি দেয়া হয়, আর আসন বরাদ্দ দেয় ১১৫টি। ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সড়কপথের যাত্রাপথ সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রেনের চাহিদা বেশি। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা এ সেবা থেকে বঞ্চিত। সেই সঙ্গে কক্সবাজার পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকেও দু-একটি ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে নতুন ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু লোকবল সংকট ও ইঞ্জিনের অপ্রতুলতায় সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার রুটের ট্রেনে ঢিল ছোড়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানা গেছে রেল সূত্রে । সে কারণে চলমান স্পেশাল ট্রেনে কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব করেছে পূর্বাঞ্চল রেলের পরিবহন বিভাগ। কোরবানির ঈদের পর ট্রেনটিকে এক জোড়ার পরিবর্তে একই রেক দিয়ে দিনে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা তাদের।
রেলকে লাভজনক করার চেষ্টা থাকলেও তা সফল হয়নি। অথচ এই গণপরিবহনটি সবচেয়ে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।
মানুষ রেলে ভ্রমণ করতে চায়। কক্সবাজার রুটের চিত্র দেখেও তা অনুধাবন করা যায়। রেলকে গতিশীল ও লাভজনক করে তুলতে দরকার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার উপায় বের করা। ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট লাভজনক হওয়া সত্বেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে না পারা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল হোক, লাভজনক হোক, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়ে উঠুক।