ঝুলে আছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মামলা
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
আইন মন্ত্রণালয়ে বদলি হবার পর গেল তেরমাস ধরে বিচারক নেই কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে। এ অবস্থার কারণে আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম ব্যহৃত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা এলাকার বিচারপ্রার্থী মানুষ। পাশাপাশি এই আদালতে ঝুলে আছে অন্তত সাড়ে চার হাজার মামলা।বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার তুষার কান্তি ধর বলেন, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়ে বদলী হন চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আব্বাছ উদ্দিন। তিনি বদলী হওয়ার পর এখানে নতুন বিচারক পদায়ন হয়নি। এ অবস্থার কারণে আদালতে বাড়ছে মামলাজট। বর্তমানে আদালতে ৪হাজার ৪শ৫১ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।’জানতে চাইলে চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এএইচ এম শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা একাধিকবার জেলা জজের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছি। লিখিত আবেদনও দিয়েছি। এরপরও চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ পদায়ন করা হচ্ছে না। বিচারক পদায়ন না হওয়ায় দেওয়ানি মামলার বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী গ্রামের মৃত রশিদ আহমদের ছেলে আবুল হোসেন বলেন, ‘২০০৬ সালে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করি। মামলাটি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শেষ পর্যায়ে চলে আসে। এরপর থেকে বিচারক না থাকায় মামলার রায় হচ্ছে না। প্রতি মাসে চকরিয়া আদালতে এসে মামলার খোঁজ নিতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছি।’ চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের রোস্তম আলী চৌধুরী পাড়ার ছরওয়ার কামাল বলেন, ‘এক জনের সঙ্গে ৪০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছে দেড় বছর ধরে। এ নিয়ে চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করি। পাঁচ মাস আগে করোনার সময় রাতের আঁধারে ভূমিদস্যুরা আমার জমিটি দখল করে নেন। বিচারক না থাকায় জমি দখলের বিষয়ে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’আদালতের কয়েকজন আইনজীবী বলেন, বিচারাধীন মামলায় তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা) নিতে না পারায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ভূমিদস্যুদের ততপরতা বেড়েছে। এছাড়াও পারিবারিক আদালতের মামলায় জঠিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। চুড়ান্ত রায়ের পর আসামিপক্ষ মোহরানার টাকা জমা দিলেও বিচারক না থাকায় ভুক্তভোগী সেই টাকা তুলতে পারছেন না।চকরিয়া আদালতে আগত বিচারপ্রার্থী এক নারীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। কিন্তু বিচারক না থাকায় তিনি মোহরানার জন্য মামলা করতে পারছেন না।
আরেক নারী বলেন, মোহরানার টাকা পাওয়ার জন্য মামলা করলে আদালত মাসিক কিস্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার আদেশ দেন। সেই আদেশের পর কয়েক কিস্তির টাকা জমা দিলেও বিচারক না থাকায় এক বছরের বেশিসময় ধরে সেই টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না এবং আসামি পক্ষ টাকা জমাও দিতে পারছেন না।চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.ওমর ফারুক বলেন, বিচারকের পদ শূন্য থাকায় মামলার বাদী-বিবাদীরা বেশ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত এই আদালতে একজন সহকারী জজ পদায়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, চকরিয়া অনেক পুরোনো উপজেলা। এছাড়া ভৌগলিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। এ জন্য চকরিয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থাপনের দাবি করছি, যাতে চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত লাখো মানুষ উপকৃত হয়।