বর্জ্যে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ
রাজু কুমার দে, মিরসরাই :
মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। কৃষি জমি ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইটভাটসহ বিভিন্ন কারখানা। সর্বশেষ সরকার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজায় ২৫ একর তিন ফসলি জমিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে বাধা দেয়া স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে কৃষি জমি অধিগ্রহণ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে চিঠি দেন। জয়পুর পূর্ব জোয়ার এলাকার কৃষক ওহিদুর রহমান জানান, ওই এলাকায় তার ৮০ শতক কৃষি জমি রয়েছে। তিনি প্রত্যেক বছর তিন মৌসুমে ১শ৪০-১শ৫০ মণ ধান উৎপাদন করেন। সরকার ওই জমি নিয়ে গেলে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে পথে নামতে হবে। পশ্চিম জোয়ার গ্রামের বাসিন্দা করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আক্তার হোসেন জানান, ১শ৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের করেরহাট ইউনিয়নে ৩ একর কৃষি জমিতে পিএনজি বিডি লিমিটেড, ১শ৫০ একর কৃষি ও অকৃষি জমিতে নাহার অ্যাগ্রোর ৩টি প্রকল্প, ১৫ একর কৃষি জমিতে সিপি বাংলা কারখানা স্থাপন করে। কহিনূর কেমিকেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৫ একর কৃষি জমি কিনে নিয়েছে। প্রায় ৫৫ একর কৃষি জমিতে ৫টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মেরিডিয়ান, গাংচিলসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি জমি কেনার জন্য স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজায় ২৫ একর তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করে ওই জমিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা জমিগুলো পরিদর্শনে আসলে স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটি তাদের ফিরিয়ে দেয়। ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা ভূমি, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে লিখিত চিঠি দেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করেরহাট ইউনিয়নে আবাদি জমি রয়েছে ১৫শ হেক্টর। চলতি বছর আউশ আবাদ হয় ১০ হেক্টর, ১৩শ হেক্টর জমিতে আমন ও ১শ ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া চাষ হয় বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমি সবজি। তবে গত ১০ বছরে ওই ইউনিয়নে প্রায় ৫০-১শ হেক্টর কৃষি জমি কমে গেছে বলে জানান সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম।
করেরহাট পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি মো. সোয়াইব জানান, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে করেরহাট ইউনিয়নে সেচ ও ড্রেনেজের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেই কৃষি জমিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মাণ করলে ২০-২৫ হাজার মানুষ না খেয়ে মরবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি জমি ভরাটের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। পশ্চিম জোয়ার পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি নির্দেশ তিন ফসলি জমিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মাণ করা যাবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি জানান, করেরহাটে কৃষি জমিতে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন না করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রক্রিয়া করা নির্দেশ দেয়া হয়েছে।