চলছে নিউরো ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং প্যারেন্টস কাউন্সেলিং
রাজু কুমার দে, মিরসরাই :
প্রায় ৭ হাজার প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুর সেবা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে মিরসরাই অটিজম সেন্টার। ইতিমধ্যে জমি কেনা সম্পন্ন হয়েছে। শুধু হয়েছে ভবন নির্মাণ কাজ। তবে অস্থায়ী ভবনে চলছে অটিজম শিশুদের সেবা প্রদান। সূত্র জানায়, এক সময় উপজেলার প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের সনদ পেতে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যেতে হতো। শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কাঠখড় পুড়িয়ে সনদ পাওয়া কষ্ট সাধ্য ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করতে তাদের এমন কষ্ট তাড়িত করে উন্নয়ন সংগঠক মো. আলমগীরকে। তৎকালীন মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এর সহযোগিতায় এবং প্রাক্তন মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) এর মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। এর পর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সনদ পেতে আর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যেতে হয়না। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে এই পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে।এই উদ্যোগে ২০১২ সালে শুধুমাত্র মিরসরাই উপজেলা নয় বাংলাদেশের সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এসেসমেন্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছে।এদিকে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মো. আলমগীর প্রতিষ্ঠা করেছেন মিরসরাই অটিজম সেন্টার। উন্নয়ন সংস্থা অপকার সহযোগীতায় ২০১৯ সালের ৫ জুলাই এর যাত্রা শুরু হয়। ৭ হাজার অটিস্টিক শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা প্রদানের টার্গেট নিয়ে চালু হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসা, ভোকেশনাল স্কুল কার্যক্রম। দরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কবরস্থানের ব্যবস্থাও থাকবে। এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্লিপটন গ্রুপ, আন্তর্জাতিক সেবামুলক সংগঠন রোটারিক্লাব, লায়ন্স ক্লাব সহ দেশীয় ও বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা।সরেজমিন মিরসরাই অটিজম সেন্টারে দেখা যায়,ধাপে ধাপে অটিজম শিশুদের নিউরো ডেভেলাপমেন্ট ওয়ার্ক, কাউন্সিলিং, অকুপেশনাল থেরাপী, ফিজিও থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং প্যারেন্টস কাউন্সিলিং চলছে। চাইল্ড রিহ্যাবিলিটার তাসফিয়া তানজুম নিলা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের এ ধরনের সেবা জেলা শহর ছাড়া পাওয়া যায়না। মিরসরাইতে অটিজম সেন্টার এর কারনে শিশুরা এখান থেকে সেবা পেতে শুরু করেছে। অটিস্টিক শিশু ইছা তুহিন এর পিতা নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের বয়স ১৮ বছর। কিছুটা হলেও যদি আমার ছেলে স্বাভাবিক হয় এই আশায় অটিজম সেন্টারে নিয়ে আসি। এখনকার পরিবেশ আমার ভালো লেগেছে। মিরসরাই অটিজম সেন্টার পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার অটিজম বিষয়টিকে উন্নয়নের মুলধারায় সম্পৃক্ত করেছে। মফস্বল এলাকায় এই উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের জন্য মাইলফলক হবে বলে আমি মনে করি।ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালকও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিরসরাই অটিজম সেন্টারে ভোকেশনাল ট্রেনিংসেন্টার নির্মাণের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে ক্লিফটন গ্রুপ। মিরসরাই অটিজম সেন্টার নিয়ে অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলমগীর বলেন, মিরসরাই অটিজম সেন্টারে বর্তমানে অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিও থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল, খেলাধুলায় দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, সঙ্গীত চর্চা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিকীকরণ, আচরন পরিবর্তন, টেকনিক্যালক্লাস, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দক্ষতামূলক যোগাযোগ, দলীয় কাজ, এ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে।