সুমন শাহ্, আনোয়ারা
দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ানোই যেন গ্যাংয়ের সদস্যদের একমাত্র কাজ। ভ্রমণপিপাসুদের খিদে মেটাতে গিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে গ্যাং পৌঁছে যায় বিদেশেও। বাইরের দেশ হিসেবে গ্যাংয়ের সদস্যদের পা পড়েছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের স্থানে। পর্যটন এখন দেশের বৃহৎ শিল্প। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে এই খাত। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাণিজ্যিক ট্রাভেল এজেন্সির বাইরেও গড়ে উঠেছে এমন কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তারমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং’।২০১৩ সালের কথা, দুই বন্ধু ওয়াফিউল হক ও সাকিব নাবিল। দু’জনই পড়তেন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে। বদ্ধ ঘরে মন টেকে না; ঘুরে ঘুরে পৃথিবীটা দেখার ভীষণ ইচ্ছা তাদের। তাই প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামের পাহাড়, ঝর্ণা কিংবা গিরিপথ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তেন তারা। কিন্তু ভ্রমণের বেলায় মানুষ যত কম হয় সীমাবদ্ধতা হয় তত বেশি। তাই প্রয়োজন হয় একটা টিমের। তাদের উদ্যোগে টিম তৈরি করা। করেন একটি টিমও। সবাই মিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে ‘ট্যুরিস্ট গ্যাং’ নামে একটি চ্যাট গ্রুপ খোলেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই চ্যাট গ্রুপের মাধ্যমেই চলত ভ্রমণের আয়োজন। শুরুর দিকে দল বেঁধে চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি জায়গা গুলো ভ্রমণের পাশাপাশি কলেজের শিক্ষা সফরের আয়োজনও করতেন তারা। ভ্রমণের পরিসর আরও বড় করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে ‘চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর ফেসবুকে একই নাম দিয়ে আরো একটা গ্রুপ খুলে। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। গ্রুপে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও ট্যুরিস্ট গ্যাংয়ে যুক্ত আছেন সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, আইনজীবি, গৃহিনীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।গত ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর ট্রাভেল গ্রুপ ‘চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং’ প্রকৃতির লীলাভূমি ও বার আউলিয়ার পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতে প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক নিয়ে দুইদিনের ভ্রমনে এসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন ট্যুরিস্ট গ্যাং।‘চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং’ মাধ্যমে ভ্রমণে যাওয়া এক ভ্রমণপ্রেমী মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, ভ্রমণের জন্য দেশে এবং দেশের বাইয়ে অনেক জনপ্রিয় স্থান রয়েছে। যে গুলোতে সঙ্গী ছাড়াও যাওয়া যায় না। খরচও অনেক। আমি চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করেছি। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে তারাই এক বিশ^স্ত ট্যুরিস্ট গ্যাং হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তাদের পথচলা আরো সুন্দর হোক সে কামনা করি।এ ট্রাভেল গ্রুপটি দেশের বাহিরে এবং দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমনপ্রেমীদের জন্য আয়োজন করেন ট্যুারের। বিগত তিন বছর ধরে প্রতি রমজানের সময় বিভিন্ন এতিমখানায় ইফতার সামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণও করে এ গ্যাং। এছাড়াও করোনাকালেও বিভিন্ন অসুস্থ রোগীদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাতও বাড়ায়। এমনটায় জানান ‘চিটাগং ট্যুারিস্ট গ্যাং’ প্রধান এডমিন সাকিব নাবিল।তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসেই ভ্রমণের আয়োজন করে থাকি আমরা। সদস্যদের তালিকাটাও বেশ বড় করি না। আগে মানুষ তথ্য জানত না। এখন যাওয়ার জায়গা সহজেই সামনে চলে আসছে। কেউ কোনো এক জায়গার সন্ধান পেলে তা ফেসবুকে পোস্ট করছে বা কোথাও যাওয়ার কোনো আয়োজন হলে তাও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানানো হয়। আমরা কম খরচে মানুষকে বেড়ানোর সুযোগ দিতে চাই। আমরা চাই টাকা যেন কারও ভ্রমণে বাধা না হয়। খরচ যত কমানো যায় সে চেষ্টা করি। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করি আমরা এবং যাতে পরিবেশ নোংরা না হয় সে জন্যও প্রত্যেক সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া থাকে।
গ্রাম