কক্সবাজারে পরিবেশগত সংকটসহ জনপদ বিলীন হওয়ার আশংকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের উপকুলীয় জনপদ সাইয়াডেইলের দক্ষিণে রক্ষাকবজ বেড়িবাঁধ লাগোয়া চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এ অবস্থার কারণে পরিবেশগত সংকটাপন্ন জনপদ সাইরাডেইল পাশের জালিয়াপাড়াসহ পুরো মাতারবাড়ি ইউনিয়নটি সাগরে বিলীন হবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর বিকালে মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মার্মার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে একটি শক্তিশালী ড্রেজার জব্দ করেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সম্প্রতি মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের উপকুলীয় জনপদ সাইয়াডেইলের রক্ষাকবজ বেড়িবাঁধ লাগোয়া চর কেটে বালু উত্তোলনে নেমেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বিভিন্ন কোম্পানির উন্নয়নকাজে মাটি সরবরাহের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় জমির মেম্বার ও আকরামের নেতৃত্বে অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলটি অল্পখরচের মধ্যে মাটি সরবরাহ দেয়ার জন্য কৌশলে সাইয়াডেইলের দক্ষিনে বেড়িবাঁধ লাগোয়া চর কেটে বালু উত্তোলনে নেমেছে। আদালতের অভিযানের বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আহমদ উল্লাহ। তিনি বলেন, সাইরাডেইল সংলগ্ন সাগর তীরের বেড়িবাঁধ লাগোয়া চর কেটে বালু উত্তোলন করা হলে চরম পরিবেশগত সংকটে পড়বে পুরো মাতারবাড়ি ইউনিয়ন। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৪ অক্টোবর মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মার্মা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি প্রমাণ পেয়েছেন। পরে তিনি ঘটনাস্থল থেকে জড়িতদের ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছেন। এটি মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের জিন্মায় দিয়েছেন আদালত। ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আহমদ উল্লাহ বলেন, অভিযানের পর জরিমানা করে গত ২৮ অক্টোবর আদালত নির্দেশ দিয়েছেন ড্রেজারটি ছেড়ে দিতে। আমি ওইদিনই ড্রেজারটি পরিষদের পক্ষ থেকে অবমুক্ত করে দিয়েছি। শুনেছি, এখন নতুন করে আবারও অভিযুক্তরা উল্লেখিত চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি। ড্রেজার মেশিন জব্দ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুইচিং মং মার্মা বলেন, অভিযুক্ত মহলটি একটি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ড্রেজারটি আটক করে স্থানীয় পরিষদের জিম্মায় দিই। তবে ওইসময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে ড্রেজার মালিকপক্ষ আদালতে উপস্থিত হয়ে অপরাধ স্বীকার করলে আইনের সর্বনিম্ন ধারায় তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যেহেতু বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, উত্তোলন করেনি। তবে নতুন করে যদি তাঁরা চর কেটে বালু উত্তোলন করে তাহলে অবশ্যই কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, আদালতের অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন জব্দ পরবর্তী জরিমানা করা হলেও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগিতায় অভিযুক্ত মহলটি বর্তমানে ঘটনাস্থলের চরকেটে বালু উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে অবৈধভাবে চর কেটে বালু উত্তোলনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে পরিবেশ আইনে বলা আছে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বিশেষ করে সাগরের তীর বা নদীর চর থেকে কোনভাবে বালু উত্তোলন করা যাবেনা।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি পরিদর্শন টিম পাঠানো হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।