ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম অঞ্চল
নিজস্ব প্রতিবেদক »
অভিযোগের শেষ নেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে। সরকারের পক্ষে সুন্নি আক্বিদার লোকজনের সঙ্গে লেগে থাকার মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করার মতো সব কাজই তিনি করে চলেছেন। রাঙামাটিতে দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। এরপরও নিজের কর্মকান্ড বদলাননি ছাত্রশিবিরের সাবেক এই ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি নষ্টের। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদভিত্তিক ইসলামী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে ব্যতিব্যস্ত তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করেছিলেন তৌহিদুল আনোয়ার। ওই বিভাগেরই জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক একবার বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে তাঁকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, এই জামায়াত শিবিরের ক্যাডার এখানে কী করে?
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ মুহূর্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তৌহিদুল আনোয়ার। পরবর্তীতে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি না নিয়ে সাবেক মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের যোগসাজশে একলাফে উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। এই পদে চাকরি করার সময় পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণে বরখাস্ত এবং বিভিন্ন কর্মস্থলে বিল ভাউচার বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে।
তৌহিদুল আনোয়ারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপির প্রতিষ্টাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত মেজর রফিক উল্লাহর ভাগিনা তিনি। ফলে ১৯৯৬ সালে বিএনপির বিদায় মুহূর্তেও তিনি সহজেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকরি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের বাড়ি সন্দ্বীপ হওয়ায় জমায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও তৌহিদুল আনোয়ারকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। উল্টো তিনি সর্বদা বিভিন্ন স্থানে ঝামেলা পাকান, বর্তমান সরকার বিব্রত হবার মতো নানা সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন একে একে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তিনি নিজেকে ধর্ম সচিবের বেয়াই বলে পরিচয় দিতেন।
অভিযোগ ওঠেছে, তৌহিদুল আনোয়ার সন্দ্বীপ উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকাণ্ড জামায়াত শিবিরের সাবেক ক্যাডারদের হাতেই দিয়ে রেখেছেন।
নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের নীচ তলায় তৌহিদুল আনোয়ারের কার্যালয়। তবে তিনি থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায়। সেখানে তিনি একতা ভবন নামের ছয়তলা একটি ভবনের একাংশের মালিক তিনি। এখানে ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ভবনে ও আশেপাশে জামায়াতে ইসলামের ভাবধারার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাস। ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির চবি’র আাবসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর জামায়াত অনুসারীরা দ্রুত জায়গা জমি কিনে বসতবাড়ি করতে থাকে। এতে ক্যাম্পাসে তাদের চিরস্থায়ী দখল প্রতিষ্ঠিত হয়।
অভিযোগ ওঠেছে, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে দায়িত্ব পালনের পর তিনি রাতারাতি টাকার কুমিরে পরিণত হন। মসজিদের মাঠের একটি বড় অংশ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিয়ে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন।
চট্টগ্রামের প্রধান দুইটি মসজিদের একটি জমিয়তুল ফালাহ, অন্যটি আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলাম ও তাদের ভাবধারার লোকজন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে কেন্দ্র করেই কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। আর সুন্নি আক্বিদার সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ থেকে। জামায়াতের লোকজন এ নিয়ে সবসময় ক্ষুব্ধ থাকতেন। তারা জমিয়তুল ফালাহকেন্দ্রিক ইসলামি কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও সফল হননি। এমনকি বিগত বিএনপি জামায়াত সরকারও এই কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু তৌহিদুল আনোয়ার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামে আসার পর জামায়াতের এজেন্ডাই সুকৌশলে বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় আলেমদের।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, কিছু লোক আমাকে জামায়াতে ইসলাম বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। অসুবিধা কী? আমি জামায়াত, আমার মন্ত্রী জামায়াত, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের সবাই জামায়াত। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার আগে এখানে ইদ্রিস নামের এক লোক ছিলেন। তিনিই সব কাজ শুরু করেন। আমার আমলে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, কারা আমাকে জামায়াত বানানোর চেষ্টা করছে তা আমি জানি। তাদের বার্ষিক গোপন প্রতিবেদনও আমার হাতে। আমাকে জামায়াত বানানোর চেষ্টা করা হোক, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।