রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
মৌসুমী ফল তরমুজ সুস্বাদু ও রসালো, তাই ছোট বড় সকলের প্রিয়। তরমুজের স্বাদ নিতে সবার মন চায়। কারণ প্রচ- গরমে একটি তরমুজের খ- স্বস্তি এনে দেয়। তৃষ্ণা মেটাতে এ ফলের জুড়ি নেই। শরীরের এনে দেয় আলাদা প্রশান্তি। চিকিৎসকদের তথ্য মতে তরমুজের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এসব কারণে চলমান অসহনীয় তাপমাত্রায় তরমুজের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে তরমুজ পাঠানোর রেওয়াজ তো আছেই। এসময় তরমুজের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে কতিপয় অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত ফায়দা লুটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উখিয়ার ব্যস্ততম হাটবাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতা সাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট আকারের একটি তরমুজের দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫০ টাকা। যা চিরাচরিত নিয়মে বিক্রি হয়ে আসছিল ৫০ টাকা দরে। বড় সাইজের এক একটি তরমুজের দাম আদায় করা হচ্ছে ৫ থেকে ৬শ’ টাকা।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে তরমুজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে অনাকাক্সিক্ষত তরমুজের দাম আদায়ের ঘটনা নিয়ে ক্রেতা সাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অনেকেই বলছে হাটবাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নিত্যপণ্যের পাশাপাশি মৌসুমী ফলের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে তরমুজের দাম কিছুটা বেড়েছে। উখিয়া স্টেশনের তরমুজ ব্যবসায়ী নিয়ামত আলী, শামশুল আলম জানায়, আগে এখানে কিছু কিছু তরমুজের আবাদ হলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত তরমুজের সাইজ ছিল ছোট ও মাঝারি। তরমুজ চাষে জড়িতরা চাষিরা তরমুজ উৎপাদন খাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করেও যথাযথ দাম পায়নি। যে কারণে স্থানীয়রা তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ওই ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসব তরমুজ চড়ামূল্যে ক্রয় করে পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরী নিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে তুলনামূলক ভাবে দাম বাড়িয়ে নিতে হয়। তা না হলে লাভের বদলে লোকসানের ঘানি টানতে হবে। কুতুপালং বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১শ’ টাকা দরে। জানতে চাইলে তরমুজ বিক্রেতা নুর মোহাম্মদ জানান, এসব স্থানীয় উৎপাদিত তরমুজ। ক্ষেত থেকে এসব তরমুজ কেনা হয়েছে গড়ে ৫০ টাকা দরে। খরচ পুষিয়ে একটি তরমুজের দাম পড়েছে ৭৫ টাকা। ১শ’ টাকায় বিক্রি করলে কিছু লভ্যাংশ পাওয়া যাবে এমন আশা ব্যক্ত করে ওই তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, অন্যান্য এলাকা থেকে তরমুজ সরবরাহ করে এত কম দামে তরমুজ বিক্রি করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, তরমুজ চাষাবাদে স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হলে উখিয়ায় তরমুজের বাম্পার উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। একই কথা বললেন স্থানীয় পরিবেশবাদী যুবক ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের উপজেলা সভাপতি বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও তাদের মাঠ পর্যায়ের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করলে স্থানীয় উৎপাদিত তরমুজ চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব। বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় নিয়োজিত ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ রসালো ফল তরমুজের চাহিদা সবখানেই রয়েছে। চাহিদা মতো তরমুজ উৎপাদন না হওয়ার কারণে চড়া দামে তরমুজ খেতে হচ্ছে। তাদের মতে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবার চড়া দামে বিক্রিত তরমুজের স্বাদ নিতে পারলেও নি¤œ আয়ের মানুষের আদৌ কাংঙ্খিত এ ফলের নাগাল পায় কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াইশ একর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। পরিবেশ ও মাটির গুনাগণের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে এখানে তরমুজের উৎপাদন ভাল হবে। তরমুজ চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তারা যেন তরমুজ চাষাবাদ করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে পারে এজন্য কৃষি অফিস থেকে যতদুর সম্ভব সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা আশ^স্ত করেন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মহি উদ্দিন মুহিম জানায়, মৌসুমী ফল তরমুজ শরীরের পুষ্টিগুন ছাড়াও অনেক উপকার করে।
বিশেষত যারা ধুমপানে আসক্ত তাদের জন্য তরমুজ ওষুধী গুণের মতো কাজ করে। নিস্তেজ শরীরকে ক্ষণিকের জন্য তরতাজা করতে এ ফলের কোন বিকল্প নাই। তাই ছোট বড় সকলের উচিত এ মৌসুমী ফলের স্বাদ গ্রহণ করা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, পবিত্র রমজান মাসে সবধরনের নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিত হাটবাজার মনিটরিং করা হবে। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের মূূল্য তালিকা টাঙ্গিয়ে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।