প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্টগ্রামের চুনতি রেঞ্জের হারবাং অভয়ারণ্য বনবিটের অধীন পাহাড়ি জনপদ ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন ফাঁসিয়াখালী বনবিটের উচিতারবিল, শীল ডেবা, জোড়া ডেবা ও ডুলাহাজারা বনবিটের মালুমঘাট ও ফুটের ঝিরির সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১হাজার ৩শ ২ হেক্টর বনভূমি হচ্ছে বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বুনো হাতি, বন্য শূকর, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। কিন্তু গত দশবছরে এসকল বন্যপ্রাণীর এই আবাসস্থল ধ্বংসের অংশ হিসেবে গাছপালা নিধন, পাহাড় সাবাড় এবং সংরক্ষিত বনভূমি দখলে নিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা, শত শত বাড়িঘর।এতে নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়ে অনেকটা পাগলের মতোই হয়ে পড়েছে বন্যপ্রাণি। বিশেষ করে বড় বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে বন্যহাতি। প্রতিনিয়ত বন্যহাতির দল খাবারের সন্ধানে হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। এ সময় দলছুট বন্যহাতির তা-বে বসতবাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন ছাড়াও অসংখ্য মানুষের প্রাণহানিও হচ্ছে সময়ে সময়ে। সর্বশেষ শুক্রবার ১১ ডিসেম্বর ভোররাতে চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে বাঁশখাইল্লা পাড়ার খাবারের সন্ধানে অতর্কিত লোকালয়ে ঢুকে পড়ে দলছুট একটি বন্য হাতি। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে হাতিটি মানুষের নজরে পড়ে যায়। এতে দলছুট হাতিটি এখান থেকে ওখানে ছুটতে থাকে। আর উৎসুক মানুষও দলছুট হাতিটির পিছু নেয়। এই অবস্থায় হাতিটিকে নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে। অবশ্য এদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত সাতঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ফের বন্যহাতিটিকে বনাঞ্চলে ফেরাতে সক্ষম হন বনবিভাগের লোকজন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম।ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম জানান,শুক্রবার ভোররাতে চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল হয়ে একটি দলছুট বন্যহাতি ঢুকে পড়ে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বাঁশখাইল্লা পাড়ার লোকালয়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে। পরবর্তীতে হাতিটি মানুষের তাড়া খেয়ে পুচ্ছলিয়া পাড়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে। এদিকে দলছুট একটি বন্য হাতি লোকালয়ে নেমে আসার খবর পেয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও মো.তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের ডিএফও আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ এর নেতৃত্বে বনবিভাগ, সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। তারা যৌথভাবে হাতিটিকে নির্দিষ্ট আবাসস্থলে ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন। পরবর্তীতে সক্ষমও হন। পরিবেশবাদী সংগঠন, স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহলের অভিযোগ, চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীন চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বনাঞ্চলে নির্বিচারে বন উজাড়, সেখানে অবৈধ বসতি নির্মাণ, ইটভাটা স্থাপনসহ প্রাকৃতিক তা-বে ১০-১২ বছর আগে থেকে বন্যপ্রাণী তথা বন্যহাতির আবাসস্থল একেবারেই ধ্বংস দেওয়া হয়েছে। মূলত অভয়রাণ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে বন্যহাতির দল নেমে আসা শুরু করে লোকালয়ে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু বলেন, বন্যপ্রাণী তথা বন্যহাতির আবাসস্থল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগসহ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
ইতোমধ্যে অভয়ারণ্য এলাকার ৬০ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এসিস্টেট ন্যাচারাল রিজেনারেশন (এএনআর) বাগান এবং বন্যপ্রাণির আবাসস্থল উন্নয়নে পশুখাদ্য উপযোগী ৪০ হেক্টর বাগান সৃজন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরো ১শ হেক্টর এলাকায় পশুখাদ্য উপযোগী বাগান সৃজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর ধ্বংস হয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য আগেকার অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে আশাকরি বনাঞ্চলে হাতির নিরাপদ আবাসস্থল যেমন তৈরি হবে, তেমনি খাদ্য সংকটও কেটে যাবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।