এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া
মাতামুহুরী নদীর শাখা ঢেমুশিয়া খালের ওপর স্থায়ী একটি সেতুর অভাবে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের মানুষ। বর্তমানে তক্তার সেতুটি ভেঙে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে গ্রামের লোকজন। এতে বেকায়দায় পড়েছে স্কুল ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থী। উপকূলীয় দুইটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল খালের ওপর নতুন করে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর শাখা খাল মধ্যম কোনাখালী ভরামুহুরী খালটি খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল। যাতায়াতে দুই ইউনিয়নের মানুষ নৌকা দিয়ে পারাপারই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। ছিলনা এলাকার মানুষের তেমন কোন যোগাযোগের রাস্তাঘাট। ১৯৯১সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পরে বেসরকারি এনজিও সংস্থা কারিতাসের অর্ধায়নে ওই ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। ব্রিজ নির্মিত হওয়ার পর কয়েক বছর যেতে না যেতেই ওই ব্রিজের কাঠের পাতাটন, পিলারগুলো মরিচিকায় ধরে নষ্ট এবং অকেজো হয়ে ভেঙে যায়। ব্রিজের উপরে থাকা দু’পাশের এঙ্গেল সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় মাদ্রসা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বছরের পর বছর ধরে দুই ইউনিয়নের সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের অর্থায়নে যাতায়াত উপযোগী সেতুটি কাঠের তক্তা বসিয়ে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে পারাপার করে আসছিল। বর্ষা মৌসুমে সেতুর উত্তর পাশের অংশ দেবে কাঠের তক্তাগুলো উঠে যাওয়ার কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে যাতায়াতে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। শুধু একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন তের গ্রামের বাসিন্দা।স্থানীয় দারুল ইরফান কওমি মাদ্রাসা কর্তৃক শিক্ষার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রথমে লোহার এঙ্গেলের ওপর তক্তা বিছিয়ে ছোট আকারের সেতু নির্মাণ করলেও প্রায় তিনবছর আগে এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় গাছের তক্তা দিয়ে ফের সেতুটি মেরামত করলেও বর্তমানে সেই তক্তার সেতুটি ভেঙে পড়েছে খালে। যাতায়াতের একমাত্র এই সেতু ব্যবহারকারী মানুষের পক্ষে দাবি উঠেছে খালের ওপর স্থায়ী একটি পাকা সেতু নির্মাণের। এলাকাবাসী জানান, ১৯৯১ সালের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যা স্থানীয়ভাবে লালব্রিজ হিসেবে পরিচিত। তখন থেকেই দুই ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া, লতাবুনিয়া পাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, ডিয়ারপাড়া, সিকদার পাড়া, মুছারপাড়া, জমিদার পাড়া, নোয়াপাড়াসহ দুই ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসী জানান, এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল না করলেও মোটর সাইকেল, রিক্সা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তক্তার সেতুটি ভেঙে গেলেও কেউই জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছেন না। এখানে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রায় দীর্ঘ চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। এতে এলাকার তের গ্রামের মানুষের মাঝে বেড়ে যায় চরম ভোগান্তি।
কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, স্থায়ীভাবে খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য কোনাখালী এবং ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে যৌথভাবে প্রস্তাবনা দেয়া হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তিনি বলেন, এখন নতুন করে এলজিইডিতেও প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।
খালে ভেঙে পড়া তক্তার সেতুটি আপাতত চলাচল উপযোগী করা হবে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে। সেতুটি মেরামতের কাজ শুরু করা হবে কয়েকদিনের মধ্যে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সরেজমিনে এই সেতু পরিদর্শনপূর্বক নতুন করে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের সংযোগস্থল ঢেমুশিয়া খালের ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা কেন বাস্তবায়ন হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে। এখানে স্থায়ী সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।