একদিনে পাইকারিতে বেড়েছে ২৪ থেকে ২৭ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতে শুল্ক আরোপের খবরে শনিবার রাতের মধ্যেই খাতুনগঞ্জে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এ সময়ে হিলি বন্দরের পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের বাজারে আসলো কিনা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা এককথায় অপারগতা প্রকাশ করেন।
গতকাল রোববার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৩৩ থেকে ৪০ টাকা। আর মহারাষ্ট্রের নাসিকের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৪১ থেকে ৪৩ টাকা। সে হিসেবে রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এ পণ্যের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
এদিকে টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, গত বছর এ সময়ে (২০ আগস্ট) যে মানের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, তা গতকালের খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসেবে বেড়েছে ৪৪ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায় তা গতকালের বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৬ টাকা। যা বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।
গতকাল বিকালে খাতুনগঞ্জে ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। তাছাড়া বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই।
হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকাররা দুষছেন আড়তদারদের। আর আড়তদারেরা ভারতের নতুন শুল্কহার যুক্ত হওয়াকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে যুক্তি দেখাচ্ছেন।
এদিকে চলতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বাজারে বেঁধেছিল লঙ্কাকাণ্ড। তখন বাজারে আমদানি বন্ধ থাকায় খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার উপরে। তখন বাজারে ‘সোনার হরিণ’ হয়ে ওঠা পেঁয়াজের দাম মাস দুয়েক ধরেই অস্থির ছিল। যা নিয়ন্ত্রণে আসে জুনের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু শনিবার রাত থেকেই পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতে শুল্ক আরোপের খবরে খাতুনগঞ্জের বাজার আবারও চড়া।
পাইকারি ব্যবসায়ী ফোরকান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘আমরা আড়তদারদের পেঁয়াজ বিক্রি করি। আড়তদারেরা যে দর দেয়, সেই দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদারেরা আমাদেরকে বলেছেন শনিবার রাতেই আড়তে যে পেঁয়াজ এসেছে তাতে ভারতের নতুন শুল্কহার যুক্ত হয়েছে। যার ফলে দাম বেড়েছে।’
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ‘রাতে যে পেঁয়াজ বাজারে এসেছে তা নতুন শুল্কহারযুক্ত। যার ফলে দাম বেড়েছে।’
পেঁঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নতুন শুল্কহার যুক্ত ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয় শনিবার প্রকাশ হলে রাতের মধ্যেই খাতুনগঞ্জের বাজারে আমদানির এ পেঁয়াজ আসলো কখন এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক কোন কিছু বলতে রাজি হননি।
আরেক আমদানিকারক বলেন, ‘শুল্কহার বাড়ানোর বিষয়টি শনিবার রাতে প্রকাশ হলেও প্রকৃতপক্ষে আরো এক সপ্তাহ আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন হিলি বন্দরের ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া আমদানি খরচ, বুকিং রেট বেড়েছে। তার মধ্যে পেঁয়াজ পচনশীল হওয়াতেই প্রতি মণে ৭ থেকে ৮ কেজি পচে যায়। সবমিলিয়ে গত শনিবার রাতে যে পেঁয়াজ আড়তে এসেছে তা গত সপ্তাহের বুকিং দেওয়া। যা টনপ্রতি কেনা পড়েছে মানভেদে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে পরিবহন খরচ আছে।’
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে বলছে, কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন ৩৫ লাখ টনের বেশি। আর চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন। উৎপাদন বেশি হলেও আমদানি করতে হয়, কারণ ২৫ শতাংশ বা তারও বেশি উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা জটিলতায় নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছর (জুন-জুলাই) থেকে এই দুই মাসে আমদানিকারকরা ১২ লাখ ৩৪ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে। যেখান থেকে আমদানি হয়েছে ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশের বেশি।
প্রসঙ্গত, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এতে ১৬ মার্চ থেকে দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দেশি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ৪ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ৫ জুন থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এতে এক মাস পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী থাকলেও গতকাল থেকেই চড়েছে পেঁয়াজের দাম।