সড়কে মৃত্যুর মিছিল দায় নিচ্ছে না কেউ

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা, সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশসমূহ আমলে নিচ্ছে না যানবাহন মালিক কর্তৃপক্ষ ও চালক-শ্রমিক। এমন কি প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনাও উপেক্ষিত থেকেছে। প্রতিদিনই মায়ের কোল খালি হচ্ছে, অনেক পরিবারে শোকের মাতম। অকালে জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থী, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অথচ কারও কোনো শাস্তি হচ্ছে না, সড়ক দুর্ঘটনার দায় কেউ নিচ্ছে না।

গত রবিবার চকরিয়া ও পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়, এদের মধ্যে দুইজন সহোদর ভাই। চকরিয়া লক্ষ্যারচর জিন্দাবাজারের কাছে এক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে কভার্ড ভ্যান মোটর সাইকেলকে চাপা দিলে মোটর সাইকেল আরোহীদের ২ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, ১ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এরা ৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুরাদপুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তারা চকরিয়া পৌর শহরে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। কভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

অন্য দুর্ঘটনাটি ঘটে পটিয়া বাইপাস সড়কে। দুই স্কুল ছাত্র সাইকেল নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলো, একটি বালির পিক আপ ভ্যান তাদের চাপা দিয়ে চলে যায় মর্মে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত সোমবার লোহাগাড়ার পদুয়া তেওয়ারি ঘাট সিকদার দিঘি এলাকায় আরাকান সড়কে চলন্ত বাসের সাথে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার আরোহী ১ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে।

এসব করুণ মৃত্যু সত্যিই হৃদয়বিদারক, শোকাহত পরিবারে রচিত হচ্ছে অন্তহীন বিষাদগাথা। সন্তানকে স্কুল কলেজে পাঠিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন মা-বাবা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি অফিস কিংবা ব্যবসার কাজ সেরে নিরাপদে ঘরে আসতে পারবে কিনা, এ চিন্তা পরিবারের সদস্যদের উচাটন করে তোলে। এ ধরণের অনাকাক্সিক্ষত  মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া অন্যায়।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামায় যানবাহন মালিক, রং সাইডে গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই, বড় যানবাহন পিষে ফেলছে ছোট যানবাহন, রিকশা, সাইকেল, কিংবা পথচারী রাস্তা পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে।

মটর সাইকেলে ২ জন থাকার কথা বললেও তা মানা হচ্ছে না। হেলমেট পরছে না তরুণ আরোহীরা, তার ওপর আছে বেপরোয়া গতি। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, চকরিয়ায় গত ২ মাসে ৭ মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ জন। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ঘাটতি, অথচ সে সবের প্রতিকারে কোনো উদ্যোগ নেই।

সড়ক পরিবহন আইনটি ২ বছর আগে পাশ হয়েছে কিন্তু আইনটির প্রয়োগ নেই। সংসদে পাশ করা এই্ আইনের সংশোধনী ও মতামতের জন্য কয়েকটি কমিটি করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলির কোন নড়ন চড়ন নেই।

১ সেপ্টেম্বর থেকে পরিবহন মালিকরা সিট অনুযায়ী যাত্রী নিয়ে যানবাহন চালাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার এই সংক্রমণের সময়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দায়ীদের শাস্তি না দিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না। সকল পক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে, নতুবা পরিস্থিতির উন্নতির আশা সুদূরপরাহত।