সিআরবি ধ্বংসের আয়োজন চট্টগ্রামবাসী মেনে নেবে না

বাসদের বিবৃতি

বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব যথাক্রমে কমরেড মানস নন্দী ও শফি উদ্দিন কবির আবিদ ১২ জুলাই সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যঘেরা চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবি এলাকায় বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল, কলেজসহ নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত ও ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেলওয়ের চুক্তি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভকে উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষ সিআরবিতে সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজ নির্মাণের জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ আগামী মাসেই প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে।
রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এতে রেলের আয় বাড়বে। এ সম্পর্কিত রেলের গৃহীত প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে,এ এলাকায় হাসপাতালটি পরিচালনার ফলে বেশ কিছু ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হবে, যেমন-ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জেনারেল স্টোর, ফুড স্টোর ইত্যাদি। বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশের উপর ঝুঁকিপূর্ণ কোন প্রভাব পড়বেনা,’মৃদু প্রভাব’ পড়বে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরিবেশের কি ধরনের ক্ষতি হবে, তা যাচাই করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তর বা নিরপেক্ষ কোনো সংস্থার উপর না দিয়ে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত পরামর্শকের রিপোর্টের উপরই নির্ভর করা হচ্ছে। অথচ সমকালে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তার ভাষ্য অনুসারে, সিআরবি একটি রিজার্ভ এলাকা। এখানে অনেক শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। পরিবেশের ক্ষতি করে এখানে কোন ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবেনা। রেলের প্রকল্প প্রস্তাব থেকেও স্পষ্ট, উক্ত বেসরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে গড়ে উঠা নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা মুনাফার স্বপ্ন দেখছেন। সরকারি সেবা সংস্থার এ বাণিজ্যিক প্রকল্পের ফলে চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস খ্যাত শতবছরে গড়ে উঠা সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ধ্বংস হবে, এ প্রকল্পের সাথে যুক্ত মুষ্টিমেয় মুনাফালোভী ছাড়া সবার কাছেই তা স্পষ্ট।
চট্টগ্রামের সর্বমহলের দাবি ছিল, বিদ্যমান রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করা এবং চট্টগ্রামে সরকারি উদ্যোগে নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। অথচ সরকার সে উদ্যোগ গ্রহণ না করে রেলের বিদ্যমান হাসপাতালটিকে বেসরকারি হাসপাতালের হাতে ছেড়ে দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যখাতকে আরো সংকুচিত করার পথেই হাঁটছে। তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের গ্রাসে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম শহরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, খেলার মাঠ ধ্বংস এবং সংকুচিত করা হয়েছে। নাগরিকদের নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকা-, সুস্থ বিনোদনের জন্য অবশিষ্ট সিআরবি এলাকাও আজ মুনাফার লালসায় ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের দলের পক্ষ হতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দ, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের সম্পাদিত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল এবং সিআরবিকে হেরিটেজ ও রিজার্ভ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। বিজ্ঞপ্তি