সার্কিট হাউজ থেকে জিয়ার যাদুঘর সরিয়ে ফেলা হবে

মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক »
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক খুনির বিচার এই বাংলার মাটিতে হয়েছে। যারা বাংলাদেশে ইনডেমনিটি জারি করেছে সেই জিয়াউর রহমানের বিচার বাংলার মাটিতে এখনো পর্যন্ত হয়নি। যারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করেছে- এর নেপথ্যে থাকা জিয়া পরিবারের বিচারও বাংলার মাটিতে হবে।
গতকাল দুপুরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নিউজ স্টুডিও উদ্বোধন এবং বিএফডিসির জন্য বরাদ্দকৃত স্থান পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন গুপ্তঘাতক, পাকিস্তানের দালাল। রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত কোন জাদুঘর জিয়ার নামে থাকতে পারে না। তাই চট্টগ্রাম পুরাতন সার্কিট হাউজে জিয়ার নামে চলা যাদুঘর সরিয়ে ফেলা হবে। সে ভবনকে পুনরায় সার্কিট হাউজে পরিণত করা হবে।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা, তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিএফডিসির জন্য চট্টগ্রামে স্থান বরাদ্দ দেওয়াসহ বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উন্নয়নে নানান প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে আসছেন। তাঁর সুযোগ্য পুত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অবৈতনিক দিন-রাত পরিশ্রম করছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুইটার আগে অফিসে যাওয়া তো দূরের কথা ঘুম থেকেই উঠতেন না। বেগম জিয়ার তো চিত্রনায়িকা হওয়ার কথা ছিল। দিনাজপুর থেকে এফডিসিতে গিয়েছিলেন। তার বাবা তাকে চিত্রনায়িকা হতে দেননি। সেই বেগম জিয়া হলেন প্রধানমন্ত্রী! জিয়া হত্যাকাণ্ড না হলে বেগম জিয়ার সাধ পূরণ হতো না। বেগম জিয়া কি তার স্বামীর বিচার চেয়েছেন? যারা বেগম জিয়াকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, সেই স্বপ্ন ভুলে যান। যারা দালালি করছেন, তারাও সাবধান হয়ে যান। দালালি বন্ধ করুন, জিয়ার পরিবারের পক্ষে দালালি বন্ধ করুন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সারা জীবন পদদলিত হয়েছি। শোষিত হয়েছি বারবার। বাংলাদেশ নামে কোনও নাম ছিল না, কোনও ঠিকানা ছিল না। ছিল না কোনও অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুই এ জাতির ঠিকানা খুঁজে দিয়েছেন। বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বাংলাদেশে সোনার মানুষ দরকার। এখানে সবাইকে সোনার মানুষ হতে হবে।
গান নাটকসহ শিল্প সাহিত্যের সবকটি শাখায় চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন সুস্থ ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। নতুন প্রজন্মের নিকট আবহমান বাংলাকে তুলে ধরতে হবে। সকলকে নিজ দায়িত্ব সততা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের মতো আত্মত্যাগ আর কেউ করেনি। বর্তমানেও বঙ্গবন্ধুর পরিবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে হবে। তাঁর কাজের গতির সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বিটিভির অনুষ্ঠান পরিচালক জগদীশ এষ, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল হোসেন খান, উপপরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র এলাকায় গাছের চারা রোপণ করেন। পরে তিনি টেরাকোটায় নির্মিত বাংলাদেশের ইতিহাস সম্বলিত ম্যুরাল পরিদর্শন করেন এবং বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নিউজ স্টুডিও উদ্বোধন করেন। তিনি প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে দাফতরিক কাজের খোঁজখবর নেন। শ্যুটিং স্পট, টেলিভিশন টাওয়ার, বিএফডিসির জন্য বরাদ্দকৃত স্থানও পরিদর্শন করেন তিনি।
বিটিভির অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে নগরের চশমা হিলে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, চট্টলবীর খ্যাত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন চট্টগ্রামের। কবর জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, মরহুম জননেতা চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গণমানুষের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নীতি আদর্শ বাস্তবায়নে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।