সম্পদের পাহাড় হোটেল বয়ের!

মা থাকেন কুঁড়েঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

পঞ্চম শ্রেণির পাঠ চুকাননি। সেই ছোটকাল থেকেই হোটেলবয়। পেটেভাতে জেলা শহরের ‘হোটেল লবিয়ত’-এ বয়ের চাকরি করেছেন এক যুগেরও বেশি। অষ্টম শ্রেণি পাশের ভুয়া সনদে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে। অনৈতিক কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে একবছর আগে ওই চাকরি হারান তিনি। জেলা পরিষদের মাস্টাররোলে নৈশপ্রহরী ছিলেন। নাম তার ‘মনা’। অফিসিয়াল নাম আবু বক্কর। সেই মনা জেলা শহরের আরামবাগে গড়ে তুলছেন পাঁচতলাবিশিষ্ট আলিশান ভবন। সেই বাড়ি নির্মাণের খবর চাউর হতে না হতেই শহরের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে মুখে প্রশ্ন, মনা’র এতো টাকার উৎস কোথায়?

শুধু তাই নয়, হঠাৎ রহস্যময় অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া সেই মনা’র বিধবা মা বসবাস করেন শহরের মুসলিম পাড়ায়। চার শতক ভূমির উপর টিনের চালার ভাঙাচোড়া সেই কুঁড়েঘরের অবস্থাও বড়ই নাজুক। ছিল না কোন চাকরি, ছিল না দৃশ্যমান কোন ব্যবসা। খাগড়াছড়ি শহরে পর পর চারটি হোটেলে বয়ের কাজ করে সর্বশেষ জেলা পরিষদে মাস্টার রোলে চাকরি নেন মনা। তিন বছরের মাথায় হারান সেই চাকরিও।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজী নগরে রয়েছে তার মালিকানাধীন ৭৭ ব্রিক ফিল্ড, জেলা শহরের সবুজ বাগ এলাকায় রয়েছে পাঁচ একর ভূমি, শহরের টিটিসি সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ১০ শতক ভূমি এবং জিরোমাইল এলাকায় অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারের পাশে রয়েছে ১১ শতক ভূমি।
খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ভবনে রয়েছে মনা’র গ্রিন ভ্যালি নামে একটি আবাসিক হোটেলও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এতো সম্পদশালী সন্তানের মা আমেনা বেগম কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। ছেলের এত সম্পদ থাকার পরও মায়ের ভরণপোষণ চালাতে হয় মেয়েকে। তাও মানুষের বাসায় কাজ করে যা আনে তা খেয়েই চলে মা-মেয়ের জীবন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক বাল্যবন্ধু জানান, জেলা শহরের শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সাল ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে মনা। জীবনের প্রথমদিকে পলিথিন বিক্রি করতো। তারপর হোটেল বয়ের কাজ করেছে দীর্ঘসময়। হঠাৎ করে মনে হয়, আলাদীনের চেরাগ পেয়েছে!
মনা’র মা আমেনা বেগম জানান, দুই মেয়ে, দুই ছেলে রেখে আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার অনেক কষ্টে সন্তানদের লালন পালন করে বড় করেন। বড় ছেলে এত সম্পদ অর্জনের পরও আমার জীবনের দুঃখ ঘুচল না, এটাই বেশি বেদনার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনা কোন সদুত্তর না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।