সংঘাতের পথ পরিহার করতে হবে

প্রায় আট বছর পর বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অনেকদিন শান্ত থাকার পর দেশের পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠতে দেখে মানুষের মনে শংকা দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই পৌনে দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সংকটে আছে দেশের অর্থনীতি। নতুন করে সংকট দানা বেঁধেছে সাম্প্রতিক হামাস-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধের কারণে। রাজনীতির মাঠ সহিংস হয়ে উঠলে দেশের অর্থনীতিতে সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তাঁরা। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখা এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে এ মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো সংঘাতময় পরিস্থিতির ইতিবাচক সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি সবাই বলছেন, দেশে হরতাল-অবরোধের সংস্কৃতি ফিরে এলে আমদানি-রফতানি খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়ার শংকা রয়েছে। তাছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলে বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক তথ্য যাবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ তো দূরের কথা, বিনিয়োগ ঋণ পেতেও বাংলাদেশকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
হরতাল-অবরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের নাভিশ্বাস, তারমধ্যে মানুষ যদি কাজে বের হতে না পারে তাহলে তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও ভঙ্গুর।
কমে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে রেমিট্যান্স। তাছাড়া বিশ্বে আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়েও জনমনে শংকা কাজ করছে। বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব যেমন একজন বিত্তবান মানুষের ওপর পড়বে, একইভাবে দিনমজুর, দিনে এনে দিন খায় এরকম হতদরিদ্র মানুষকেও প্রভাবিত করবে। পাশাপাশি উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্যিক তৎপরতার ক্ষেত্রেও এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কাজেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ভাবতে হবে। রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয় তাহলে মানুষকে কষ্ট দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন কখনও কাম্য হতে পারে না। এ সত্য যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করবেন রাজনীতিকেরা তত দ্রুত মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসবে।