শোক আর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করলো চট্টগ্রামবাসী। পুষ্পস্তবক অর্পণ, সভা, দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ সকল আঞ্চলিক কার্যালয়, ওয়ার্ড কার্যালয়, স্কুল-কলেজ হাসপাতালে জাতীয় পতাকাসহ সিটি করপোরেশনের পতাকা অর্ধনমিত করা হয়।

নগরীর টাইগারপাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় চসিকের কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। এরপর দোয়া মাহফিল ও নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা হয়েছে। চসিকের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আরও ছিল বৃক্ষরোপণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা।

সভায় চসিক মেয়র বলেন, ‘যিনি বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে মুক্তির মোহনায় উপনীত করেছিলেন, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে কারান্তরীণ হয়ে কাটিয়েছিলেন, যার তর্জনী হেলনে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র সংগ্রামী ও গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠেছিল, এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য, সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালির কপালে কালিমা লেপন করেছিল স্বার্থলোভী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। তাদের পিছনে কলকাঠি নেড়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু দেশী, বিদেশী কুচক্রী মহল। সময়ের পরিক্রমায় সবকিছুই আস্তে আস্তে জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপর খন্দকার মোস্তাক স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ও মেজর জিয়া সেনাপ্রধানের দায়িত্বে এসে তাদের কলুষযুক্ত চেহারা উন্মোচন করে।’

মেয়র রেজাউল বলেন, ‘সেদিনের কথা মনে হলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রাতারাতি সবকিছু যেন বদলে গিয়েছিল তখন। কিন্তু স্বৈরাচার ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং সপরিবারে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠীর অত্যাচার, নিপীড়ন, প্রলোভনকে পদদলিত করে জীবনবাজি রেখে আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এর মধ্যদিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার হাতে ন্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শোকের মাসে ডাক দিয়ে যাই- আসুন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা। আর হতাশা নয়, অভিমান নয়। সুবিধাবাদীদের হটিয়ে, তাদের সকল চক্রান্তকে পদদলিত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঝান্ডা ওড়াই। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে আমরা ঋণী। আমরা দায়বদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণের কাছে।’

সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঊর্ধ্বতনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মিলিত শোক র‌্যালি বের করেন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এসময় বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতিহাসে বাংলাকে শাসন করেছে এমন বহু শাসক আছেন। কিন্তু ওনারা কেউ মহানায়কের উপাধি পাননি। ইতিহাসের প্রথম বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার, সচিব মো. আব্দুল আলীম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো, সিআইডি, জেলা পরিষদ, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র ও আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রসহ সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। খবর সারাবাংলা।

এদিকে সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে ফুল দিয়ে শোক দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করে মহানগর আওয়ামী লীগ। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ দলটির নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার কর্মসূচি পালন করেছে নগর আওয়ামী লীগ।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। এসময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আকতার হোসেন সৌরভ, ফয়সাল রফিক, মেহেদী হাসান, আরাফাত উল করিম, রুবেল সিকদার, আশেকুন নবী, আমজাদ হোসেন ইমরান, মিজানুর রহমান মিজান ছিলেন।

শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।

প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, সহ-সভাপতি প্রবাল দে, বিধান বিশ্বাস ও তপন শীল, সম্পাদকম-লীর সদস্য ভাস্কর রায় ও বাবলা চৌধুরী এবং সদস্য সুভাষ ঘোষ, ইমা বড়ুয়া ও নটরাজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির উদ্যোগে প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।