রোজার আগেই বাড়ছে ছোলা-খেজুরের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক »

দেশে পর্যাপ্ত এলসি ও ডলার সংকটের দোহাই দিয়ে বাড়ছে ছোলা ও খেজুরের দাম। গত বছর রোজা শুরু হয় ৩ এপ্রিল থেকে। ওই সময় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সেই ছোলা এখন প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশেরও বেশি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্যমতেও বছরের ব্যবধানে ১৬ শতাংশের বেশি দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।

দেশীয় বাজারে ছোলা ও খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে রমজান মাসে। আর ২২/২৩ দিন পর রোজা শুরু হবে।

বাজার পরিস্থিতি বলছে, এবারের রোজায় মানুষকে ছোলা ও খেজুর কিনতে হবে গতবারের চেয়ে বেশি দামে। কারণ এ দুটি পণ্যের আমদানি কম হয়েছে। সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়।

খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর খাতুনগঞ্জে ছোলার আমদানি গতবছরের তুলনায় কমেছে। বিগত তিন মাসে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। মটর ডালের আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। তবে মসুর ডালের আমদানি বেড়েছে।
অন্যদিকে এবার খেজুরের আমদানি গতবারের তুলনায় বেশি কমেছে। প্রতিবছর রোজায় দেশে খেজুরের চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টনের মতো। বিগত তিন মাসে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। অবশ্য জানুয়ারিতে খেজুর আমদানির ঋণপত্র ১৩ হাজার টন বেড়ে ২৯ হাজার টনে দাঁড়ালেও ফেব্রুয়ারিতে যেসব খেজুরের এলসি করা হয়েছে তা এখনো বাজারে আসেনি বলে জানান খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল খাতুনগঞ্জে সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ভালো মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আড়তে ভালো মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এর চেয়ে কম মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। প্রতি কার্টন আজোয়া খেজুর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, মাসরুব খেজুর ২ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, সাফারি ২ হাজার ৪০০ টাকায়, ছরা প্রতি কার্টন দুই হাজার এবং জাহেদী প্রতি কার্টন এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রহমান ডেটস ট্রেড এর স্বত্বাধিকারি আহসানুল হক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো জানুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে। এই খেজুর এখনো আসেনি। যার একটি অংশ চলতি মাসে আসার কথা রয়েছে এবং অন্য অংশ রোজার মাঝামাঝি সময়ে আসবে। আমদানি করা এ খেজুরের দাম অন্যসময়েও তেমন কম থাকে না। তবে রমজান মাসে এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এবার খেজুরের সরবরাহ অন্যান্যবারের তুলনায় কম হওয়ার দাম কমার সম্ভাবনা কম।

রেয়াজউদ্দিন খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আলম ট্রেডিং এর ম্যানেজার মো. বাবুল হোসেন বলেন, জানুয়ারিতে যেসব খেজুর আমদানি হয়েছে তা সামান্য। অনান্য বছরের তুলনায় এবার তেমন খেজুর আমদানি করা যায়নি। আমরা আলজেরিয়া ও মিশরে এলসি করেছি। তা আসতে সময় লাগতে পারে রমজানের মাঝামাঝি। এখন আড়তে যা আছে তা দিয়ে বাজারে সরবরাহ করছি।

খেজুরের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে কেজিপ্রতি দাম বাড়তি চলছে। এলসি করা খেজুর রমজানের আগে চলে এলে বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসতে পারে।