রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনোনয়ন চাচ্ছি

৮ আসনে মনোনয়ন প্রার্থী আবদুচ ছালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক »


চট্টগ্রামবাসীর অতি পরিচিত মুখ আবদুচ ছালাম। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সূত্র ধরে তাকে চট্টগ্রামবাসী সিডিএ ছালাম হিসেবেই চেনে। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের আদর্শে শুরু করেন ছাত্র রাজনীতি। পদ-পদবি ছাড়াই দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকার পর মোহরা ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ১৭ বছর। ২০০৫ সালে মোহরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর ঘনিষ্ঠতা হয় সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। এরপর তাঁর হাত ধরে মহানগর আওয়ামী লীগে কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নেন আবদুচ ছালাম। কর্মজীবনে তিনি গড়ে তুলেন ওয়েল গ্রুপের মতো একটি শিল্প পরিবার। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন চেয়ারম্যান হিসেবে। সম্প্রতি চান্দগাঁও-বোয়ালখালী এলাকার সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর ওই আসনে নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন আবদুচ ছালাম। এ আসনের উপনির্বাচন ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় সুপ্রভাতের।


সুপ্রভাত : চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও- বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে আপনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। আপনি তো কখনও কোনো নির্বাচন করেননি। এবার কেন মনোনয়ন চেয়েছেন।

আবদুচ ছালাম : আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলাম না। কিন্তু আমাদের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে সরাসরি কোষাধ্যক্ষ করেছেন। আমার জন্য তিনি যেন কোনো দ্বিধায় না পড়েন, আমি সেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং তাঁর মানও রাখতে আমি সক্ষম হয়েছি। একইভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০০৯ সালে সিডিএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। সেটিও সঠিকভাবে পালন করেছি। নেত্রী একবারও যেন উনার সিদ্ধান্ত ভুল মনে না করেন, সবসময় সেদিকেই লক্ষ্য রেখেছি এবং আমি সফল হয়েছি। আর সফল হওয়া ব্যক্তি বারবার সফল হতে চায়। তাই চট্টগ্রাম-৮ আসনে আমি নির্বাচিত হয়ে সফল সাংসদ হওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার সেই স্বপ্ন থাকা স্বাভাবিক। তবে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে, সেটি আমরা জানি না।

সুপ্রভাত : ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আপনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের প্রার্থীর কারণে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

আবদুচ ছালাম : ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সমীকরণের কারণে নির্বাচন করতে পারিনি। কিন্তু এবার উপনির্বাচনে তো মহাজোটের সমীকরণ নেই। আমার নেত্রী জানেন, কার কী যোগ্যতা আছে, কাকে দিয়ে কী কাজ হবে। এই এলাকার উন্নয়নের জন্য নেত্রী একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রার্থী করবেন, এটা আমার বিশ্বাস। এই এলাকার উন্নয়নের জন্য নেত্রী যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে নমিনেশন দিতে পারেন।

সুপ্রভাত: নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, সেটা এক বাক্যে মেনে নেওয়ার কথা বলছেন সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু মনোনয়ন না পেলে, পরবর্তীতে আপনাদের মধ্যে কোনো কোন্দল বা দূরত্ব সৃষ্টি হবে কিনা?
আবদুচ ছালাম : যারা আওয়ামী লীগ করে তারা যেখানে যা করুক না কেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তকে শেষ পর্যন্ত মেনে নেন। এটি নিয়ে কোনো দ্বিমত করার মতো মুনাফেকরা আওয়ামী লীগ করে না। সুতরাং এমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই।

সুপ্রভাত : আপনি রাজনীতি করছেন মহানগরে। আসনটি মহানগর ও দক্ষিণ জেলার। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে আপনি কেমন সহযোগিতা পাবেন? এককথায় মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়া নিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস কেমন?

আবদুচ ছালাম : রাজনীতি যেখানেই করি না কেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগ করি। মনোনয়ন কে পাবেন, সেটা তো এখনও নিশ্চিত না। যদি আমি পাই, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবশ্য সহযোগিতা করবেন। এছাড়া এ আসনের দুই ভাগ হচ্ছে আমার বাসস্থান চান্দগাঁওয়ে আর এক ভাগ হচ্ছে বোয়ালখালী এলাকায়। আশা করি, জয়ী হওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। কেননা এদিকের ভোট আমি পাবো, আর বোয়ালখালী এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থা বেশ শক্ত। আর সকলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আছে।

সুপ্রভাত : আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এ আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আপনিও একজন। এখানে চ্যালেঞ্জ কেমন দেখছেন?

আবদুচ ছালাম : আমি তো সিডিএ চেয়ারম্যান পদে ১০ বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসেছি। আমি কতটুকু উপযুক্ত তা চট্টগ্রামবাসী জানেন। সিডিএ’র চেয়ারম্যান থাকাকালে ফ্লাইওভার, আউটার রিং রোডসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। যা একটি শহরের জন্য অভাবনীয়। সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যা করেছি, তা নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছে। আমি কোনো কথা বলিনি। এখন আমার প্রকল্পগুলো সময়ের সাথে সাথে সমালোচনার জবাব দিচ্ছে। আর এটি দেখে, এই আসনের এলাকাবাসীও আমাকে চাচ্ছেন। এখানে আমি কাউকে চ্যালেঞ্জ মনে করি না। তবে একটা কথা হলো- চ্যালেঞ্জ ছাড়া কোনো কিছু সফল হতে পারে না। আমি আমার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। বাকিটা আমার নেত্রীর সিদ্ধান্ত।

সুপ্রভাত : নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর প্রতি আপনার ওয়াদা কি হবে?
আবদুচ ছালাম : দেখেন, আমি কাউকে ওয়াদা দিই না। কারণ ওয়াদা দিলে সমস্যা আছে। তবে মনোনয়ন পেলে তখন এলাকাবাসীর সঙ্গে বসে তারা কি চায় তা ভাববো। তাদেরকে নিয়েই তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাই মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার কর্মপরিকল্পনা বলতে পারবো।

সুপ্রভাত : এ আসনে কালুরঘাট সেতু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। আপনি নির্বাচিত হলে নতুন সেতু নির্মাণে কতটুকু গুরুত্ব দেবেন? আর সেতু বাস্তবায়ন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আবদুচ ছালাম: আমি প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। সিডিএ’র যেসব প্রকল্প আমি বাস্তবায়ন করেছি, তা আগে কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি। নতুন কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের জন্য আগের দু’জন এমপির চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না, আন্তরিকতারও অভাব ছিল না। আসলে এ সেতু নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে আমি মনে করি, আল্লাহ পাক কাকে দিয়ে কী কাজ করাবেন তা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। আল্লাহ পাক যাকে দিয়ে সেতু বাস্তবায়ন লিখে রেখেছেন, তিনিই বাস্তবায়ন করবেন। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

সুপ্রভাত : বিগত দুইজন সংসদ সদস্যের আমলে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে ওই এলাকার মানুষ আস্থার জায়গাও দুর্বল হয়ে গেছে। আপনার ওপর বোয়ালখালীবাসী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নে কতটুকু আস্থা রাখতে পারেন ?

আবদুচ ছালাম : আমি বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেছি পরিবার থেকে। যারা পরিবারের আস্থা অর্জন করতে পারে না, তারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। সিডিএ’র চেয়ারম্যান থাকাকালে আমি রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য দশ হাজার বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করেছি। অথচ আমি কোনো বুলডোজার, নোটিশ, কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাইনি। ওরা নিজের জায়গা নিজেরা ছেড়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা আমাকে বাকিতে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। কাউকে অগ্রিম কোনো টাকা দিইনি। এরকম নজির বাংলাদেশে নেই। চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে কীভাবে এতোটা বিশ্বাস করলো, এটা ভাবতে আমার আশ্চর্য লাগে। সিডিএ’তে আমি বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। তাই এখন বোয়ালখালীর মানুষ আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন। বোয়ালখালীবাসী মনে করছে, আমি এমপি হলে নতুন কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হবে। তবু আমি বলবো, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

সুপ্রভাত : মনোনয়ন পেলে এবং জয়ী হলে প্রথম কোন কাজটি আপনি করতে চান?

আবদুচ ছালাম : মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথম কাজ হলো এলাকাবাসীর সঙ্গে বসে কি কি করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা। আর মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়া নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমি চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপিকে তাদের অবস্থান বুঝিয়ে দিতে। আর জয়ী হওয়ার পর প্রথম সেই কাজটিই করবো, যে কাজটি স্থানীয় জনগণের একান্ত প্রয়োজন।