মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ বাড়ছে : গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বাড়ছে। বিগত ১মাস ধরেই সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হচ্ছে। সামরিক জান্তার হাতে গুলি, আটক, মৃত্যুর খবর প্রায় প্রতিদিনই আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ ও অবরোধ আরোপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। গত বুধবার দেশটির কয়েকটি শহরে বিক্ষোভরত জনতার ওপর নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালালে প্রাণ হারায় ১৮ জন। এর কয়েকদিন আগেও নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির দলের বিপুল বিজয় সামরিক বাহিনী মেনে নিতে পারেনি। ১ ফেব্রুয়ারি সংসদ আহ্বানের দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ সু চির দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। যুক্তরাজ্য আজ শুক্রবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছে। খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রন্সিস বিক্ষোভকারীদের দমন নিপীড়ন বন্ধ করে কর্তৃপক্ষকে সংলাপের পথ বেছে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের চ-নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত প্রবল হলেও বৃহৎ শক্তি চীন মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষকে সমর্থন দেয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ভারতও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ মনোভাব নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার বা গণতান্ত্রিক রূপান্তর ব্যাহত করার যেকোন উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলে জানিয়েছে। মিয়ানমার সেনবাহিনী ১৯৬২ সাল থেকেই দেশ শাসন করছে। ২০১৫ সালে বেসামরিক সরকার ফিরে এলেও কার্যত ক্ষমতা মিয়ানমার সেনবাহিনীর হাতেই থেকেছে। সংসদে তাদের এক চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে। মন্ত্রিসভার ৩ গুরুত্বপূর্ণ পদ তাদের দখলে। তাছাড়া তাদের সমর্থিত একটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে জটিল করেছে। বিশ্ববাসী এটা জানে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতনে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন করেছে তারা এখন কি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সচেষ্ট হবে?
নিরাপত্তা পরিষদ যদি মিয়ানমার সামরিক সরকারের ওপর অবরোধ আরোপ না করে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃঢ় না থাকে তাহলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কাবু হবে না। নিরাপত্তা পরিষদের কাজ হওয়া উচিত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সামরিক জান্তাকে বাধ্য করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারের অনুপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার কথা বললেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যারা নিজেরা উৎপীড়কের ভূমিকায় ছিলো তারা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক সাড়া দেবে-এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বৃহৎ শক্তিগুলি যদি অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্তা অব্যাহত রাখতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দেয় তবে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। শুধু রোহিঙ্গা নয়, মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীও সেদেশে নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। একটি গণতান্ত্রিক শাসন যেখানে সার্বজনীন মানবাধিকার ও সকল নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত থাকবে, তার জন্য জাতিসংঘ, বৃহৎ শক্তিবর্গ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা আশা করি। এই ধরণের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্যও প্রয়োজন।