বর্ষায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি :
মানিকছড়িতে পাহাড় কাটা যেন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। আবার পাহাড় সমতল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জমির মালিকের সাথে আপসরফার মাধ্যমে ফসলি জমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি বা উর্বরা অংশ) অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে অতীতের মতো বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের মতো বিপদজনক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শেষের দিকে ও চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির পাহাড় কাটা চক্রের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বিচারে ছোট-বড় পাহাড় বা টিলা কাটা হচ্ছে। পাহাড় খেকোরা কখনও কখনও রাতের অন্ধকারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে আবার কখনও কখনও দিনমজুর দিয়ে মাটি কেটে সাবার করছে। নানা সময়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন তারা। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মাটি কাটার সিন্ডিকেটটি পাহাড় বা টিলার মালিককে ফুসলিয়ে তার জমিন ( পাহাড় বা টিলা) সমান করে দেয়ার কথা বলে মাটি কেটে তা অন্যত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রায় ৩৫-৫০ ফুট ধারণ ক্ষমতার ট্রলিতে পাহাড়ি মাটি বিক্রি করছেন ৮০০-১০০০ টাকা করে। তাছাড়া পাহাড় কেটে সমতল করে অন্যায়ভাবে ছোট-বড় প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে তারা। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণে পাহাড়গুলো ধসে যে কোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুঘটনা।
উপজেলার কুমারী, বাটনতলী ও যোগ্যাছোলার বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায়, কৃষি কাজে ব্যবহৃত জমিতে পুকুর কিংবা দিঘী তৈরি করে দেয়ার নামে চলছে জমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) অপসারণ। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে প্লট তৈরি করতে কৃষি জমির টপ সয়েল ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ফলে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, পাহাড় এবং জমির টপ সয়েল কাটার সাথে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিব্রতবোধ করতে পারেন। তবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পরিবেশ বিরোধী এমন অপকর্ম চলতে পারে না। কারণ আইনের ন্যূনতম বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ জানান, পাহাড় কাটার কোনো অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।