ভেজাল তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে

ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর বলে সরকার বাজারে খোলা তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু তাতে খুব বেশি একটা লাভ হয়নি। বন্ধ করা যায়নি খোলা তেল বিক্রি। খুচরা পর্যায়ে কিছুটা কমলেও বাজারের সেই মানহীন ও ভেজাল ভোজ্য তেল বিক্রি করা হচ্ছে বোতলে বিভিন্ন কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে।
বাজার থেকে খোলা পাম ও সুপার পাম তেল সংগ্রহ করে বোতলজাতের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগিয়ে ‘সয়াবিন তেল’ নামে বিক্রি করা হয়।
আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে শহরতলী ও গ্রামীণ এলাকাকে টার্গেট করে এসব ব্যবসায়ী। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বোতল। এসব বোতল সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় ভাঙ্গারি বা স্ক্র্যাপের দোকান থেকে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি একইভাবে বোতলজাত করছে সরিষা ও নারকেল তেলও। এদের কাছে বিএসটিআই-এর কোনো অনুমোদনও নেই।
খাদ্যপণ্য উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন লাগে। কিন্তু এসব তেলের বিএসটিআই এর কোন অনুমোদন নেই। অথচ বিএসটিআই এর লোগো এবং নাম্বার ব্যবহার করে তেলের বোতলে স্টিকার লাগানো হয়েছে। বাজারে পরিচিত কোম্পানিগুলোর নামের খুব কাছাকাছি নাম এবং লোগোর মতো করেই স্টিকার তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা এসব স্টিকার দেখে সহজেই প্রতারিত হচ্ছেন। বোতলে তেলের পরিমাপও ঠিক নেই। এক লিটার ওজনের তেলের বোতলে অন্তত ২০০ গ্রাম তেল কম দেয়া হয়।
অভিযানের পরও বেপরোয়া এসব ব্যবসায়ী। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার, বিএসটিআই ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালিত হওয়ার পরও কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না এসব অসাধু ব্যবসায়িক কর্মকা-। ১২ সেপ্টেম্বর নগরীর কর্ণফুলীর কালারপোল স্কুলের পাশে ভেজাল সয়াবিন তেলের কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। এ কারখানা থেকে অননুমোদিত বিভিন্ন ব্রান্ডের লোগো ব্যবহার করে বাজারজাত করার সময় মূলহোতা আলমগীর, তার দুইজন সহযোগী সাইফুল আলম হৃদয় ও মো. শাকিল নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ২ হাজার ৬৬১ লিটার ভেজাল সয়াবিন তেল।
ভেজাল তেলে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কোলেস্টেরল বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। নষ্ট হতে পারে লিভার, কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। খোলা স্থানে নোংরা ড্রামে সংরক্ষণ এবং সেখান থেকে পরিত্যক্ত বোতলে ভরা সবকিছুই করা হয় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ফলে এই তেল খাওয়ার পর চর্মরোগ থেকে শুরু করে গুরুতর সংক্রামক রোগও হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া করার মতো রোগ হতে পারে।
ফলে প্রশাসনকে আরও অভিযান চালাতে হবে যাতে কোনোভাবেই খাদ্যে ভেজাল করতে না পারে কেউ। বিশ্বের কোনো সভ্য দেশে খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল করতে পারে না কেউ। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। এখানে নকল, ভেজালের মতো গুরুতর অপরাধে শাস্তির মাত্রা এতই কম যে অপরাধীরা তাই ভ্রুক্ষেপই করে না। শুধু কিছু জরিমানা গুনে তারা পরিত্রাণ পেতে পারে। দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি চললে বাংলাদেশের বাজার কখনো ভেজাল ও নকলমুক্ত হবে না।