ভাগ্যবান ৮০৯ শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড : এইচএসসি পরীক্ষা পরীক্ষা ছাড়াই তারা পাশের সনদ পাবে : পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

ভূঁইয়া নজরুল»
বোয়ালখালী পশ্চিম খরনদ্বীপের গ্রাম পুলিশ মোহাম্মদ শেফুর পুত্র মোহাম্মদ শাহজাহান। বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাংলা বিষয়ে ফেল করার পর আর পড়ালেখা করেনি। ইতিমধ্যে পরিবারের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর এখন একটি কোম্পানির সেলস মার্কেটিংয়ে কাজ করছে শাহজাহান। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ২ দশমিক ৯৪ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্র্ণ হওয়া শাহজাহান এখন পুরোদস্তুর চাকুরি করছে। কিন্তু তারপরও এবার মাত্র এক বিষয়ে ফরম পূরণ করেই এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে শাহজাহানের মতো এমন ভাগ্যবান ৮০৯ জন। যারা শুধু ফরম পূরণ করেই এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের সনদ পাবে।
জানা গেছে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৬৩ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। বিধি অনুযায়ী এবারের পরীক্ষার্থীরা আবশ্যিক বিষয়ের পরিবর্তে তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেবে। ইতিমধ্যে পরীক্ষার রুটিনও প্রকাশিত হয়েছে। ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সেই পরীক্ষা শেষ হবে ৩০ ডিসেম্বর। ফলে বিগত তিন বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় (২০১৭,২০১৮,২০১৯) বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি এই তিনটি বিষয়ে একসাথে কিংবা যেকোনো একটিতে ফেল করে তারা ফরম পূরণ করলেই উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, পরীক্ষা বিধিমালা অনুযায়ী শুধু তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর পূর্ববর্তী পাবলিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নম্বর নির্ধারণ করা হবে। তাই অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যদি কেউ আবশ্যিক বিষয়ে ফেল করে থাকে তাহলে এবার ফরম পূরণ করলেই পাশ।
এদিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করলেই পাশ, এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কতো জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘মানবিকে ৫২৭ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৮২ জনসহ মোট ৮০৯ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। অনিয়মিত এসব পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিগত পরীক্ষায় যারা বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ফেল করেছিল তারা এই সুবিধা পেয়েছে।’
বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ সমীর কান্তি দাশ বলেন, কলেজ থেকে এমন প্রায় ২০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবশ্যিক দুই বা তিন বিষয়েও ফেল রয়েছে। তবে করোনাকাল হওয়ায় সরকারের দেয়া সুযোগে তারা এবার পাশ করে যাচ্ছে।
একই মন্তব্য করেন পাহাড়তলী কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল মজুমদার। তিনি বলেন, কলেজ থেকে এ ধরনের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন রয়েছে। কয়েক বছর আগের হওয়ায় অনিয়মিত এসব পরীক্ষার্থীদের ফোন করে খুঁজে বের করতে হচ্ছে।
এদিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞানে ১৮ হাজার ৯২৩, মানবিকে ৩৮ হাজার ১০৪ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩২ হাজার ৩১২ জন অংশ নিচ্ছে। এছাড়া তিন বিভাগে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে ১০ হাজার ৯০৭ জন। তাদের মধ্যে বিজ্ঞানের ১৩৫২ জন, মানবিকে ৫ হাজার ৫৬০ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ হাজার ৯৯৫ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিচ্ছে ৯০ জন এবং প্রাইভেট পরীক্ষা দিচ্ছে ১২৭ জন।
উল্লেখ্য, কোভিড পরিস্থিতির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস কমিয়ে আনা হয়েছে। গত এপ্রিলে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষার বিষয় সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে অ্যাসাইনমেন্টও নেয়া হয়েছিল। করোনার কারণে তিন বিষয়ের পরীক্ষা নিতে না পারলে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হতো। এদিকে পরীক্ষায় আরো অংশগ্রহণ বাড়াতে ২৪ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ফরম পূরণের সময় বর্ধিত করা হয়েছে।