বোলারদের দ্যুতিতে সাধ্যের মধ্যেই লক্ষ্য

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের বোলাররা চমৎকার বোলিং করলেন। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নিজেদের আওতার মধ্যেই রেখেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজুর রহমান-সাকিব আল হাসানদের বোলিংয়ের সামনে অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করেছে ১২১ রান।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ করেছিল ১৩১ রান। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে ১২২ রানের লক্ষ্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। বলা যায়, ব্যাটসম্যানদের জন্য সাধ্যের মধ্যেই ‍লক্ষ্য রেখেছেন বোলাররা। যার নেতৃত্বে ছিলেন মোস্তাফিজ। মিরপুরের উইকেট স্পিন বান্ধব বলা হলেও এই পেসার আলো ছড়িয়েছেন। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট।
আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। সাকিব ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট পেলেও বেঁধে রেখেছিলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানদের। মেহেদী হাসান ৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। আর আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নাসুম আহমেদ কোনও উইকেট পাননি। ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়েছেন।
তাদের চমৎকার বোলিংয়ের সামনে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন মিচেল মার্শ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান মোয়েসেস হেনরিকসের। এছাড়া শেষ দিকে মিচেল স্টার্ক অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে।
সেই ক্যারি, সেই মেহেদী
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বলেই বাংলাদেশেকে উইকেট এনে দিয়েছিলেন শেখ মেহেদী হাসান। আজ (বুধবার) দ্বিতীয় ম্যাচেও তার হাত ধরেই এলো বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। আবারও এই স্পিনারের বলে আউট হয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারি।
বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন মেহেদী। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তার বলে আউট হওয়ায় আজ আর শুরুতে স্ট্রাইকে যাননি ক্যারি। তবে বাঁচতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন নাসুম আহমেদের হাতে। ফলে প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও মেহেদীর শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ক্যারি। ফেরার আগে ১১ বলে ২ বাউন্ডারিতে করে যান ১১ রান।
মোস্তাফিজের বল বুঝতেই পারলেন না ফিলিপে
আক্রমণাত্মক নয়, বরং খুব বেশি সাবধানী ছিলেন জশ ফিলিপে। প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা যে মোটেও সুখকর ছিল না তার। কিন্তু সাবধানী হয়ে কী করবেন, মোস্তাফিজুর রহমানের বলটাই তো বুঝতে পারলেন না অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। বাঁহাতি পেসারের অফ কাটার যতটা লাফিয়ে ওঠবে বলে মনে হচ্ছিল, ততটা ওঠেনি। ফল, লেগ সাইড দিয়ে ঢুকে ভাঙলো স্টাম্প! অস্ট্রেলিয়াকে সুবিধা করতে দিচ্ছে না বাংলাদেশের বোলাররা। শেখ মেহেদী হাসানের পর সাফল্য এনে দিলেন মোস্তাফিজ। এই পেসারের বলে রীতিমতো বোকা বনে গেলেন ফিলিপে। তিনি চিন্তাও করেননি বল এতটা স্লো ও নিচু হয়ে আসবে। তাই স্টাম্প ছেড়ে লেগ সাইডে খেলতে গিয়েও ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি। বল আঘাত করে স্টাম্পে। এরই সঙ্গে শেষ হয় তার ১০ রানের ইনিংস। ১৪ বলের ইনিংসে মেরেছে একটি বাউন্ডারি।
সাকিবের আঘাত
বল হাতে নিয়েই উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। অবশেষে উইকেটের দেখা পেলেন বাঁহাতি স্পিনার। মোয়েসিস হেনরিকসকে হারিয়ে পেয়েছেন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির প্রথম সাফল্য। স্পিন বান্ধব মিরপুরের উইকেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও সুবিধা করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। তাদের বিদায়ের পর মিচেল মার্শের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হেনরিকস। অবশেষে সেই জুটি ভাঙলো সাকিবের আঘাতে। তার লাইনে থাকা বল হেনরিকস ব্যাটে লাগাতে না পারলে সরাসরি আঘাত করে স্টাম্পে। ফেরার আগে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ২৫ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় করেন ৩০ রান।
মার্শকে ভয়ংকর হতে দেননি শরিফুল
বাংলাদেশের বোলাররা পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। মিচেল মার্শও পরীক্ষা নিয়েছেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে নিজের সঙ্গে দলীয় রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। সময় বুঝে যখন আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন এই ব্যাটসম্যান, তখনই বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিলেন শরিফুর ইসলাম।
এই পেসারের বলে আউট হয়ে গেছেন মার্শ। বাঁহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। বল ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়ার আগে মার্শ খেলেছেন ৪৫ রানের ইনিংস। ৪২ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারিতে।
মোস্তাফিজের দুয়ে দুই
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। টানা দুই বলে উইকেট পেলেও সফল হননি বাঁহাতি পেসার। তবে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও এলোমেলো অস্ট্রেলিয়া।
অ্যারন ফিঞ্চের চোটে বাংলাদেশ সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন ম্যাথু ওয়েড। প্রথম ম্যাচে কিছু্ই করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে দলের বিপদের সময় আবারও মাঠে এলেন তিনি। তবে এই ম্যাচে আরও বেশি হতাশ করলেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফিরেছেন সাজঘরে।
স্টাম্প ছেড়ে লেগ সাইডে খেলতে গিয়েছিলেন বাঁহাতি ওয়েড। বল ব্যাটে লাগাতে না পারলে সরাসরি ভেঙে যায় স্টাম্প। ফেরার আগে ৭ বলে করেন মাত্র ৪ রান।
মোস্তাফিজের ম্যাজিক এখানেই শেষ নয়। পরের বলেই অ্যাশটন অ্যাগারকে বোকা বানিয়ে তুলে নেন আরেকটি উইকেট। প্রথম বলেই অ্যাগার প্যাভিলিয়নে ফিরলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হয় মোস্তাফিজের। যদিও সফল হননি বাংলাদেশ পেসার।