‘বৃক্ষের জীবন জাদুঘর’ : খাগড়াছড়িতে প্রথম জার্মপ্লাজম সেন্টার

পাহাড়ে বিপন্ন উদ্ভিদ রক্ষায় প্রথম জার্মপ্লাজম সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থানুকূল্যে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কের লাগোয়া রিছাং ঝরনা সংলগ্ন এলাকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে সেন্টারটি গড়ে উঠেছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সেন্টারটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে এখানে ৩৬ প্রজাতির বিপন্ন, বিপন্নপ্রায় ও বিরল প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে। এই সেন্টারে উদ্ভিদের পাশাপাশি পাখিবান্ধব বৃক্ষও রোপণ করা হবে। জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক আশীষ কুমার বড়–য়া বলেছেন, বন নিয়ে যারা গবেষণা করবেন, তাদের জন্য এই সেন্টার সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে এখান থেকে বীজ ও চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জার্মপ্লাজম সেন্টারটিকে ‘বৃক্ষের জীবনজাদুঘর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আমাদের দেশে যেভাবে বনজ সম্পদ ও বৃক্ষরাজি বিপন্ন, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের অদূরদর্শী কর্মকা-ের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপন্ন অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে আমাদের প্রকৃতি ও প্রাণিবৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ আধার বিলীন হতে বসেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিশেষত বনজ সম্পদের রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে এই ‘বৃক্ষ জীবন জাদুঘর’ অপরিসীম প্রভাব রাখবে। পত্রিকান্তরে এতদসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্বত্য এলাকায় ১৮৫ প্রজাতির বৃক্ষ বিপন্ন, বিপন্নপ্রায় ও বিরল, দেরিতে হলেও মাতৃবৃক্ষ সংরক্ষণের এই উদ্যোগ জনহিতকর ও প্রশংসনীয়। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস কিউ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের যে প্রাচুর্য ছিল আমাদের দেশে, তা আর এখন নেই। একটি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। সেখানে আমাদের দেশে এর পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কর্তন করা হচ্ছে। পাহাড়Ñবনাঞ্চল ন্যাড়া করে ফেলা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বন সৃজনের পরিবর্তে বাণিজ্যিক বনায়ন চলছে। তদুপরি বনাঞ্চল কেটে বসতবাড়ি, জমি তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়-বনাঞ্চল এখন অনেকটাই সংকুচিত। চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর আশেপাশের পাহাড়, বনাঞ্চল সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কক্সবাজার জেলার অবস্থাও এর চাইতে ভিন্ন নয়। তদুপরি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পের জন্যও বিস্তৃত বনাঞ্চল উজাড় করে ফেলতে হয়েছে। ইটভাটার জন্যও বনাঞ্চল উজাড় ও বৃক্ষ কর্তন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে বন, উদ্ভিদ ও প্রাণি তথা প্রকৃতি ও পরিবেশ অসামান্য প্রভাব বিস্তার করে আছে। ধরিত্রীকে মনোমুগ্ধকর রাখতে তাদের প্রচেষ্টার বিরাম নেই। পাখিবান্ধব বৃক্ষ রোপণও তাৎপর্যপূর্ণ, আমাদের দেশ একদা দেশি-বিদেশি পাখির অভয়াশ্রম ছিল, এখন পাখিদের প্রতি নির্দয় আচরণ ও বৃক্ষ কর্তনের ফলে পাখিরা আশ্রয় নিতে যেমন আসে না। তাদের পরাগায়ণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয় একথা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সরকার থেকে বৃক্ষরোপণের ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হয় তা প্রকৃতি-পরিবেশ ও আমাদের জীবনযাপনকে ভারসাম্যমূলক ও আনন্দদায়ক করার জন্যই। সুতরাং কেবল বৃক্ষরোপণ নয় এর পরিচর্যা, সংরক্ষণেও সকল প্রকার প্রচেষ্টা নিতে হবে। জার্মপ্লাজম সেন্টার এ লক্ষ্যে একটি মহতী উদ্যোগ।