জেল-জরিমানা, মামলা
মহামারি করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁিকর আশঙ্কা থেকে সরকারি নির্দেশনার আলোকে বিভিন্ন উপজেলা লকডাউন চলছে। এতে প্রশাসন কঠোন নজরদারি করছে। বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চকরিয়া
চকরিয়ায় কঠোর লকডাউন কার্যকর নিশ্চিতে মাঠে নেমেছে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলম ও উপজেলা প্রশাসন। ১ জুলাই সকাল ৮টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর যৌথ টহল শুরু হয়েছে।
মাঠে নেমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ জাফর আলম ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী। এছাড়া প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে বাজার, মার্কেট ও শপিংমল মনিটরিংয়ে মাঠে নেমেছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠ পর্যায়ে লকডাউন কার্যকর করার নিশ্চিতে ও বাজার মনিটরিংয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন। সরেজমিনে জানা গেছে, মহাসড়কে কিছু মালবাহী গাড়ী চলাচল করলেও গণপরিবহন কোথাও চোখে পড়েনি। তবে কিছু ব্যাটারী চালিত রিকশা, টমটম ও কিছু সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। মুদিও দোকান ও বেকারী খোলা থাকলেও হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দোকানসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ দেখা যায়। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, করোনা ভাইরাস রোধে সরকার এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেন।
দীঘিনালা
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাশেম।
দীঘিনালা জোনের এ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন সুহৃদ শুভানন, দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম পেয়ার আহম্মদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডা. তনয় তালুকদার, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শাহ মোফাচ্ছেল হক, বাজার চৌধুরী জেসমিন চাকমা, বোয়ালখালী বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জসিম উদ্দীন, দীঘিনালা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু এবং প্রথম আলো প্রতিনিধি পলাশ বড়–য়া প্রমুখ। আলোচনা সভায় বিনা কারণে ঘর থেকে বের হলেই জেল এবং জরিমানা করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
পেকুয়া
মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে মোবাইল কোর্টও। সেই সাথে অঝোর বৃষ্টিতেও থেমে নেই কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের অভিযান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও স্থানগুলোতে কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মীকি মারমা, সেনাবাহিনীর পেকুয়ার ইনচার্জ মেজন শামন, পেকুয়া থানার এস আই সাইফুলসহ উপজেলার সকল ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ।
শুক্রবার সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চোখে পরে সেনাবাহিনী বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি।
চলমান এই লকডাউন নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন স্থানীয় মার্কেটের সকল দোকানপাট ও রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাজার এলাকায় কিছু সংখ্যক মানুষের চলাচল থাকলেও সকলের মুখেই মাস্ক নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় লকডাউনের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে তাদেরকেই কারণ জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। অপরদিকে যারা বিধিনিষেধ অমান্য করে ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে আইনানুগ ব্যবস্থা। চলমান এই লকডাউন চলবে আগামী ৭ জুলাই মধ্য রাত পর্যন্ত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মীকি মারমা বলেছেন, আগামী ৭ জুলাই মধ্য রাত পর্যন্ত এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মিরসরাই
মিরসরাইয়ে কঠোর লকডাউনে মার্কেট দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লকডাউনের ২য়দিন মাঠে সক্রিয় ছিলেন উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল স্বাস্থ্যবিধি না মানা, দোকান খোলা রাখা ও মাস্ক না পরায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১৬ জনকে ৩ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা। এছাড়া লকডাউন মনিটরিং করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ.স.ম জামশেদ খোন্দকার। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁসে যাওয়া বাজারের সব মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মানুষের সমাগমও তেমন ছিল না। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয়নি। তবে বড়তাকিয়া বাজার ও গ্রামের বাজারগুলোর চিত্র ভিন্ন ছিল। তারা চায়ের দোকানে আগের মত বসে খোশ গল্প করছে। মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গাড়ি চলাচল কম ছিল।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা বলেন, লকডাউনের ২য়দিন বারইয়ারহাট, শান্তিরহাট ও মিঠাছড়া বাজারে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও মাস্ক না পরায় ১৬জনকে ৩ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
টেকনাফ
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস সাত দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে। কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারের পাশাপাশি নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে লকডাউনের মধ্যেই চলছে বৃষ্টি। সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে টেকনাফ পৌরসভার বিভিন্ন চেক পয়েন্টে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। বাইরে থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢোকা গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। যারা ঢুকছেন তারা অনেকেই জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছেন। আর যারা অযৌক্তিক কারণে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে। পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এতে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। লকডাউন অমান্য করে প্রথম দিন অযৌক্তিক কারণে দোকান ও ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের দুইটি টিম ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছে। বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২৮ মামলায় ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।
এব্যাপারে টেকনাফ ট্রাফিক জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ( শহর ও যানবাহন) ফারুক আল মামুন ভূইয়া বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা এবং যথাযথ কারণ উপস্থাপন করতে না পারার কারণে অনেককে আমরা মামলা দিচ্ছি।
মানিকছড়ি
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় করোনায় চলমান লকডাউনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির, যুব রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মানিকছড়ি ইউনিট খাগড়াছড়ি ব্র্যাঞ্চের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
মাইকিং,মাক্স বিতরণসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য সচেতন করে যাচ্ছে যুব সদস্যরা। মানিকছড়ি উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে এলাকর জনগনকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান করেন। এ প্রসঙ্গে মানিকছড়ি ইউনিটের যুব প্রধান আশরাফুল আলম বলেন, যুব রেড ক্রিসেন্ট মানিকছড়ি ইউনিট করোনা শুরু থেকে যুব সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচি পাশাপাশি অত্র এলাকার জনগণের করোনা থেকে রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান জানান।