বাবার কাছেই থাকবে দুই জাপানি শিশু

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইমরান শরীফের দুই শিশুসন্তানের জিম্মার বিষয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এই দুই শিশু তাদের বাবার কাছে থাকবেন।

সন্তানদের জিম্মা নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি ইমরান শরীফের আইনি লড়াইয়ে কার্যত জিতলেন বাবা, তবে মায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে তাকে যোগাতে হবে খরচ।

বাংলাদেশের হাই কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে,  বর্তমানে ঢাকায় থাকা দুই মেয়ে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছেই থাকবে। তবে মা সন্তানদের সাথে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন।

যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস ও চাকরি করেন, সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সাথে প্রতিবার কমপক্ষে দশ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে আসা-যাওয়াসহ দশদিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। অতিরিক্ত সময়ে যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের খরচ মাকেই বহন করতে হবে।

বাবা ইমরান শরীফ মাসে অন্তত দুইবার ছুটির দিন শিশু সন্তানদের সাথে মাকে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন।

আর জাপানে মায়ের হেফাজতে থাকা ছোট মেয়ের নিরাপদ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে ইমরান শরীফ যে রিট আবেদন করেছিলেন, তা সরাসরি খারিজ করেছে হাই কোর্ট।

সন্তানদের কাছে পাওয়ার আশা নিয়ে এ দেশে আসা নাকানো এরিকোর গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ তাকে সাত দিনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বাবা ও মায়ের দুটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ইনায়েতুর রহিম বলেন, বর্তমান রিটিটি চলমান থাকবে।  কোনো পক্ষ যদি আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করে তাহলে অন্য পক্ষ আদলতে আসতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তা শিশুদের বিষয়ে দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস পরপর শিশুদের বিষয়ে হাই কোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন দেবেন তিনি।

তৃতীয় সন্তানকে ফিরে পেতে শিশুদের বাবার করা রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই এরিকো নাকানো ও ইমরানের বিয়ে হয়। তাঁদের তিন মেয়েসন্তান। গত ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। পরে ছোট মেয়েকে তার নানির কাছে রেখে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো নাকানো। ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট রিট আবেদন করেন তিনি। পরে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট আবেদন করেন ইমরান।

এরিকো নাকানো ও ইমরানের পৃথক রিটের ওপর গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। আজ রায় দেন আদালত। রায়ের আগে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে দুই শিশু তাদের মা এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় ছিল। শিশুদের বাবা ইমরান দিনের বেলায় তাদের সঙ্গে দেখা করতে ও সময় কাটাতে পারতেন।

আদালতে এরিকো নাকানোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।