বর্ষাজুড়েই থাকবে জোয়ারের দুর্ভোগ

হালিশহর এল ব্লক এলাকায় মসজিদের পাশের সড়কের সোমবার দুপুরের চিত্র- সুপ্রভাত

আগ্রাবাদ সিডিএ ও হালিশহর#
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা আজিজুল হক আরশাদ বসবাস করেন হালিশহর এল ব্লকে। সকালে অফিসে আসার সময় রাস্তায় পানি দেখেন না। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পানি উঠতে শুরু করে এবং বিকাল ৫টা পর্যন্ত পানি থাকে। তাই বিকেলে অফিস শেষে বাসায় ফেরেন তখন দেখেন পানি নেমে যেতে। আবার মধ্যরাতে পানি উঠে এবং ভোরের মধ্যে নেমে যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে এই রুটিনে চলছে পানি উঠানামা। জোয়ারের এই দুর্ভোগের সাথে খাপ মিলিয়ে চলছে হালিশহর এল ব্লক, কে ব্লক, ছোটোপুল, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার মানুষের মানুষের দিনের রুটিন।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের মেয়াদ গত মাসে শেষ হওয়ার পরও জোয়ারের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়নি বিশাল এলাকার অধিবাসীরা। যা অবস্থা চলতি বর্ষা মৌসুম এমন জোয়ারের দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই কাটাতে হবে। আগামী বর্ষায়ও সুরাহা হয় কিনা সন্দেহ রয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জোয়ারের দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়েছে উঁচু রাস্তা। পরিকল্পনাহীন ভাবে রাস্তাগুলো উঁচু করায় এখন রাস্তায় পানি না থাকলেও ঘরের ভেতরে গিয়ে পানি প্রবেশ করছে। আর নালাগুলোর গভীরতা নিচের দিকে না বাড়িয়ে উপরের দিকে উঁচু করা হয়েছে। এতে নালাগুলোর পানি ধারন ক্ষমতা না বাড়ায় সাগর থেকে আসা জোয়ারের পানি উপচে উঠছে এবং মানুষ পানিবন্দি হচ্ছে।
প্রতিবছর বর্ষা এলেই এসব এলাকার মানুষ নির্ধারিত সময়ে পানি বন্দী থাকে। এবার হয়তো এর পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারো এর পরিবর্তন হবে না বলে জানালেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী। তিনি বলেন, ‘সদরঘাট, ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। আমরা বাঁধ দিয়ে তা আটকে রেখেছি। আর বৃষ্টির পানি পাইপ দিয়ে নদীতে বের করে দিচ্ছি। কিন্তু হালিশহর ও আগ্রাবাদ এলাকায় তা সম্ভব হয়নি। মহেশখালের মুখে রেগুলেটরের নির্মাণকাজ চলছে এবং পানি ডাইভারশান করে দেয়া হয়েছে। এতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে এবং আবার নেমেও যাচ্ছে। কিন্তু নালা ও খালগুলো বাড়তি এসব পানি ধারণ করতে পারে না বলে উপচে রাস্তায় চলে যাচ্ছে এবং পানি উঠছে।
তাহলে কি এই অবস্থা থেকে এবার উত্তরন হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না, এবারের বর্ষায় রেগুলেটরের কাজ শেষ হবে না। আগামী বর্ষার আগে যাতে আমরা রেগুলেটরের কাজ শেষ করতে পারি আমরা সেই চেষ্টা করছি।
এদিকে আগ্রাবাদ সিডিএ ও হালিশহর এলাকায় নালা ও রাস্তা সংস্কারের একটি প্রকল্প ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। এই প্রকল্পের আওতায় কাজ না হওয়ার কারণে এসব এলাকায় পানি জমছে বলে অনেকের অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক ও হালিশহর এলাকায় নালা ও রাস্তা উঁচুকরনের আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় করোনার কারণে কাজ করা যায়নি। তবে এখন করা হচ্ছে। এটি শেষ হলে রাস্তায় পানি উঠা কমে আসবে অনেক এলাকায়। তবে নালাগুলো সংস্কার করার পরই আবর্জনায় আবারো ভরাট হয়ে যায়।
এদিকে নগরীর এই পানি দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে সরকার সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল। গত মাসে এর মেয়াদও শেষ হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় তা আবারো সংশোধিত আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হয়ে আসার কথা রয়েছে। তাই পূর্বের হিসেবে চলমান রয়েছে প্রকল্পের কাজ। তবে প্রকল্পের আওতার অনেক কাজ বাকি রয়েছে।