বই না কিনে ছবি তোলা নিয়ে নানাকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বাঙালির সাথে মেলার সম্পর্ক বহুকাল আগের। উৎসবপ্রেমী বাঙালির অন্যতম আনন্দের জায়গা মেলা। তবে সকলের বিশ্বাস সব মেলার সেরা মেলা বইমেলা। তাই বই কিনুক বা না কিনুক সকলে আসছেন বইমেলায়। প্রিয় বই, লেখক, প্রকাশক কিংবা পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের সাথে তুলছেন ছবি। তবে বই কেনারচাইতে বইমেলায় ছবি তোলার ও ঘুরাঘুরির প্রবণতাকে অনেকে সমালোচনাও করছেন।

সাফায়েত হোসেন নামের একজন পাঠক বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ অযথা এখানে এসে ভিড় করছেন। দেখা যাচ্ছে তারা বই কিনছেননা, হয়তো ছবি তোলার জন্য বই ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আমার কথা হচ্ছে, বইয়ের প্রতি যদি আপনার আগ্রহই না থাকে, তাহলে আপনি এখানে আসবেন কেন। যেখানে আপনার আগ্রহ সেখানে ভিড় করুন।’

পছন্দের বই হাতে ছবি তুলছিলেন ফাতিমা খাইরুন্নেসা পারসা নামের এক পাঠক। ছবি তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব মেলা তো বইমেলা নয়। আমরা আজকাল সবকিছুর সাথেই ছবি তুলি। বছরে একবারই তো চট্টগ্রামে এতো বড় পরিসরে বইমেলা হয়। তাহলে মেলায় ছবি তুললে অসুবিধা কোথায়? বইমেলায় বিভিন্নজন বিভিন্ন কারণে আসেন। সবার বইপড়ার অভ্যাস নাও থাকতে পারে। কিন্তু বইকে সম্মান করেনা এমন মানুষ বোধহয় নেই। আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলো, মুর্হূতগুলো ফ্রেমে বন্দি করে রাখতে চাই। সেখানে বইমেলা তো পুরো জাতির জন্যই একটা বিশেষ আয়োজন। সে জায়গা থেকে বইমেলার স্মৃতিধারণ করাকে দোষের কিছু মনে করিনা।’

রামিসা তাহিয়াত চৌধুরী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমরা বই কিনি এবং বই পড়ি। কিন্তু মেলা থেকে কেনা হয়না। সেটি অন্য ব্যাপার । কেননা আমি বাইরের বইয়ের দোকান থেকে বা অনলাইন থেকে নিলে ৩০-৩৫ পারসেন্টএর বেশি ছাড় পাই। কিন্তু মেলা থেকে নিলে দেখা যাচ্ছে একই বই২৫ পারসেন্ট ছাড় দিচ্ছে। তাহলে আমি মেলা থেকে বই নেবো না। জাস্ট নতুন-পুরাতন ভালো বইগুলো সম্পর্কে পরিচিত হবো। তাছাড়া এখন যুগের ট্রেন্ডিংটা এমন যে আমরা নিজেদের প্রতিদিনের কর্মকা-ই সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করি। অন্যসব মেলায় যদি কেউ জিজ্ঞেস না করে কি কিনলাম,তাহলে বইমেলায় কেন? সবার উচিত, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি,আগ্রহ ও পছন্দ-অপছন্দকে সমান গুরুত্ব দেওয়া ও সম্মান করা। আর আমরা যখন ছবি তুলি, তখন আমরা যে নিজেদের প্রচার করছি, সেটা তো নয়। আমাদের ছবির মাধ্যমে কিন্তু প্রকাশনা,বই, লেখক সকলেরই প্রচার হচ্ছে। যার ফলে সবাই বইমেলায় আসতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে বইমেলায় উপস্থিত লেখক মৌরি মরিয়ম বলেন, ‘এটা নিয়ে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই আসলে। আগে যেটা হতো লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতো। এখনও অটোগ্রাফ নেয়া হয় এবং ছবি তোলে। অটোগ্রাফটা যেমন একটা মেমোরি, ছবিও একটা মেমোরি। একজন পাঠকের ক্ষেত্রে সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে বইকেনা। কিন্তু বইমেলায় তিনি হয়তো লেখককে পেয়েছেন তখন সেখান থেকে একটা ছবি তোলা বা একটা কাগজে অটোগ্রাফ নেওয়া যেতেই পারে। এতে তো দোষের কিছু নেই।’