প্রবর্তক মোড়ে পানি আর জমবে না

উঁচু করা হয়েছে মোড় ও কালভার্ট
নির্মাণ করা হয়েছে কিছু সংযোগ ড্রেন :
সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক

ভূঁইয়া নজরুল :
প্রবর্তক মোড়। জলাবদ্ধতার প্রধান স্পট। আধঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে অন্য কোথাও হাঁটুসমান পানি জমলেও প্রবর্তক মোড়ে জমে কোমর সমান। আর বৃষ্টিপাত যদি দীর্ঘক্ষণ চলে তাহলে গলাসমান পানি জমতে সময় লাগে না। তবে এ বছর বর্ষায় তুলনামূলক বৃষ্টি কম হওয়ায় ওই চিত্র দেখা যায়নি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পাঁচফুটের বেশি উঁচু করা হয়েছে প্রবর্তক মোড়, উঁচু করা হয়েছে হিজড়া খালের ওপরের কালভার্ট, ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ভবন, নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ ড্রেনও। সব মিলিয়ে আগামীতে জলাবদ্ধতামুক্ত প্রবর্তক মোড় দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত দুদিন প্রবর্তক মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘রুপালি গিটার’ যে স্থানে বসানো হয়েছে সেই স্থানটি আগে নিচু ছিল। এখন এর অনেকটাই ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের অংশটি সবচেয়ে নিচু ছিল। সেই স্থানটিও অনেক উঁচু হয়েছে। অর্থাৎ সমগ্র মোড়টি আশপাশের রোডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উঁচু করা হয়েছে, যাতে পানি জমে পুকুর সৃষ্টি হতে না পারে। সেই সাথে হিজড়া খালের ওপর ব্রিজটি আগের ব্রিজের তুলনায় ১০ ফুট উঁচু করা হয়েছে। ব্রিজের ওপরাংশের সাথে আশপাশের এলাকার ঢালু মেলাতে সেই এলাকাগুলোও উঁচু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রবর্তক মোড়ে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে কালভার্ট ও মোড়ের উন্নয়ন কার্যক্রম। এ বিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আমরা প্রবর্তক মোড়টি (রুপালি গিটার অংশে) পাঁচফুটের বেশি উঁচু করেছি। একই সাথে হিজড়া খালের ওপর আগে যে ব্রিজটি ছিল তা ভেঙে পূর্বের অবস্থা থেকে ১০ ফুট উঁচু করা হয়েছে। একই সাথে মিমি সুপার মার্কেট এবং গোলপাহাড় এলাকা থেকে পানির স্রোত যাতে মোড়ে আসতে না পারে, সেজন্য হিজড়া খালের সাথে সংযোগ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ড্রেন নির্মাণের কারণে পানি আর মোড়ে জমবে না, আশা করছি। আগে সরু ড্রেন ছিল। এখন বড় ড্রেন দিয়ে পানিগুলো সরাসরি হিজড়া খালে পতিত হবে।’
কিন্তু হিজডা খালটি পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ভেতর সরু হয়ে আছে। খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা খালের জায়গা উদ্ধার করবো। উভয় পাশের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনটি খালের ওপর থেকে অপসারণের কাজ চলছে। এখন খালটি সবধরনের বাধামুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবনই ভেঙে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যে পুরো প্রবর্তক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তা সম্পন্ন হবার পর প্রবর্তক এলাকায় বুকসমান পানি জমার কোনো আশঙ্কা থাকছে না।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে এখনই আশাবাদী নন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ-চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক আগামীতে হয়তো প্রবর্তক মোড়ে পানি জমবে না। কিন্তু এই এলাকায় আগে যে-পানিটা জমতো, সেই পানি এখন অন্য কোথাও গিয়ে জমবে কিনা, তা দেখার বিষয় হয়ে আছে। সেজন্য কিছু সংযোগ ড্রেন নির্মাণ করতে হবে।’
প্রকল্পের আওতায় সংযোগ ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘তাহলে হয়তো পানি জমবে না। কিন্তু তারপরও ভরা বর্ষায় নগরীর পানি যাতে খালগুলো হয়ে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্ণফুিলর ড্রেজিং না হলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের শতভাগ সুফল আমরা পাবো না।

আগের চিত্র যেমন ছিল
মিমি সুপার মার্কেট এলাকা থেকে প্রবর্তক মোড়ের দিকে আসার রাস্তাটি অনেকটাই ঢালু। গোলপাহাড় মোড় থেকে প্রবর্তক মোড়ের দিকে যাওয়া রাস্তাটাও ঢালু হয়ে গেছে। পাঁচলাইশ থেকে প্রবর্তক মোড়ের দিকে আসা রাস্তটিও ঢালু। অর্থাৎ চারপাশ থেকে এলাকাটি ঢালু হওয়ায় আশপাশের এলাকাগুলোর পানি এখানে এসে জড়ো হতো। আর বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে পানি দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে বলে মুহূর্তের মধ্যে এখানে পানি জমে যায়।
কিন্তু ওই পানি হিজড়া খাল দিয়ে নেমে যাওয়ার কথা। এতদিন পানি নেমে না যাওয়ার পেছনের কারণ ছিল হিজড়া খালের ওপরের ব্রিজটি ছিল নিচু। আর ব্রিজের নিচ দিয়ে ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার কিছু বড় বড় পাইপ গেছে। এসব পাইপের কারণে পানি চলাচল করতে পারতো না। একই সাথে খালটি এক সময় ৪০ থেকে ৪৫ ফুট চওড়া থাকলেও এখন তা ১৫ থেকে ২০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক কারণে পানি নামতে পারতো না এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হতো।

বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। সিডিএ মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। গত জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও আরো দুবছর বেড়েছে এর মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যে নগরীর প্রধান খালগুলো খনন ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ শেষ করা হবে। খালের উভয় পাশে ফুটপাত তৈরিসহ যেসব এলাকায় পানি জমে সেগুলো নিয়ে বিশেষ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় পানি না জমার জন্য সংযোগ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।