পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল থামাবে কে

কয়েকদিনের বর্ষণে রোববার ষোলশহর জংশন এলাকায় আই-ডাব্লিউ কলোনিতে একটি টিনের ঘরের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে একই পরিবারের চারজন মাটির নিচে চাপা পড়ে। এতে আহত হয় চারজন। দুজনের মৃত্যু হয়। এদের একজন বাবা অন্যজন তার সাত মাস বয়েসী মেয়ে।
২০০৭ সালে চট্টগ্রামের সাতটি এলাকায় একদিনে পাহাড় ধসে মারা যান ১২৭ জন। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর পার হয়েছে, অনেক জল গড়িয়েছে কর্ণফুলীতে, অনেক কথা বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে কিন্তু থামেনি পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল। বিচ্ছিন্ন দুই-এক বছর বাদ দিয়ে প্রতিবছরই কোনো না কোনোভাবে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটেই চলেছে। গত ১৬ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে অন্তত চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবুও এই মৃত্যুমিছিল থামাতে চোখে পড়ার মতো কোনও উদ্যোগ কোনো সংস্থার নেই।
যদিও প্রতি বছর বৃষ্টির আগে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন। তারপর আর তদারকি থাকে না। বাকি সময় আর চলে না তাদের কার্যক্রম। ফলে পাহাড়ে বসতি স্থাপনের জন্য যত্রতত্র পাহাড় কাটা আর বৃক্ষ নিধন চলছে। ভঙ্গুর এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের কোলে বসবাসরত পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসন না করায় প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশাসন, সিডিএ, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়সাড়া ভূমিকাতেই প্রতি বর্ষায় মাটি চাপা পড়ে মানুষ নিহত হওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে মনে করে সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সেসঙ্গে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস এবং মানুষের প্রাণহানিকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলেই মনে করে দীর্ঘদিন পাহাড় সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার সংগঠনগুলো।
পাহাড় কাটে প্রভাবশালী মানুষেরা আর তার কুফল ভোগ করে সাধারণ ও গরিব মানুষেরা। পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে প্রভাবশালীরা সেখানে কম ভাড়ায় থাকার জন্য যায় গরিবরা। পাহাড় ধসে গেলে মারা যায় সে গরিবরা। প্রভাবশালীদের খুব ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। এই চক্র ভাঙতে হবে, নতুবা প্রতিবছর পাহাড় ধসতে থাকবে, গরিবরা মরতে থাকবে।