পার্টনারশিপ ডায়ালগে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বার্তা

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়ালগ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

টালমাটাল ভূ-রাজনীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। একদিকে কোভিড মহামারির প্রভাব, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বলয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির বিষয়ও রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে রবিবার (২০ মার্চ) ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়ালগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহৎ ইন্দো-প্যাসিফিক ক্যানভাসের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে চুপ থাকবে না দেশটি এবং এ জন্য যদি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তবু। তৃতীয়ত, ইউক্রেন ইস্যুতে আসলে কি ঘটছে সেটি বাংলাদেশ জানে বলে বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটি যে ধরনের সমাজ ব্যবস্থা চায় তার বিকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগ সাধারণ কোনও ইভেন্ট নয়, বরং ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ যে নেভিগেট করে—সেটির উপাদান এখান থেকে পাওয়া যায়।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং তাদের নীতি বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোকে প্রভাবিত করে। এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে ভারসাম্য রেখে এগোনো যায়, বিশেষ করে বর্তমান টালমাটাল ভূ-রাজনীতির অবস্থায় তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা এখান থেকে পাওয়া যায়। এ ধরনের ডায়ালগে যুক্তরাষ্ট্র কী চায় এবং তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এবং উল্টোদিকে বাংলাদেশও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।

উল্লেখ্য, ঢাকা-ওয়াশিংটন অষ্টম পার্টনারশিপ ডায়ালগে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং অন্যদিকে মার্কিন পক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।

ইন্দো-প্যাসিফিক

অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কীভাবে দেখতে চায় ওয়াশিংটন জানতে চাইলে নুল্যান্ড বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কথা বলেছি। মার্কিন বৃহৎ ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। মনে করি বাণিজ্য-ব্যবসা এবং প্রযুক্তি খাতে আমরা আরও কিছু করতে পারি।’

তিনি বলেন, ’ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি উপাদান আছে এবং আমরা খুশি হবো বাংলাদেশ যেভাবে চায় সেভাবে এখানে অংশগ্রহণ করুক।’

আমরা মনে করি—একসঙ্গে সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা যায় এবং এটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ নিয়েও সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সম্ভব বলে জানান নুল্যান্ড।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, আমার বিবেচনায় এটি একটি পরিষ্কার বার্তা। গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং স্বভাবত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় অর্থনীতি বাংলাদেশকে পাশে চাইবে তারা।

তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিককে ভূ-রাজনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক– এই দুই লেন্স দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। এবং নুল্যান্ড আজকে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য উভয় বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন।

ইউক্রেন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হচ্ছে এবং ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।

ইউক্রেন বিষয়ে নুল্যান্ড বলেছেন, বাংলাদেশ জানে ইউক্রেনে যেটি ঘটছে সেটির আসল সত্য কি। কোনও উসকানি ছাড়াই নির্মমভাবে গণতান্ত্রিক ইউক্রেনের অখণ্ডতার সার্বভৌমত্বকে আক্রমণ করা হয়েছে। কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য আমাদের সব চেষ্টা রাশিয়া নস্যাৎ করে দিয়েছে। এখন পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশকে একসঙ্গে হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একসঙ্গে সত্যি সেটি বলতে এবং এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে পারবো। ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবো।

বাংলাদেশের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে স্বৈরশাসক ও গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আমরা জানি—আমরা কি ধরনের সমাজ তৈরি করতে চাই। কিন্তু রাশিয়া এর সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পথ দেখাচ্ছে। এখনই সময় পৃথিবীর সব স্বাধীন মানুষ এবং রাষ্ট্রের এক হয়ে ইউক্রেনের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা এবং আমরা এই আলোচনা করেছি।

শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ জানে ইউক্রেনে যেটি ঘটছে সেটির আসল সত্য কি’—এই বার্তাটি অত্যন্ত শক্ত। এছাড়া ‘বর্তমানে স্বৈরশাসক ও গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে যুদ্ধ চলছে’, এটিও একটি বড় বার্তা।

তিনি বলেন, রাশিয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব হচ্ছে—তারা বিকল্প বা ভিন্ন একটি পথে হাঁটছে এবং এক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক অবস্থানের বিষয়টি খুব সামনে চলে আসে।

মানবাধিকার

নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুল্যান্ড বলেন, মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র চুপ থাকবে না। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র কথা বলবে।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ডেমোক্র্যাটদের জন্য মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ অন্যান্য যে মূল্যবোধ আছে সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেন প্রশাসনের অন্যতম মূল নীতি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে সেটি নুল্যান্ড নিজেই স্বীকার করেছেন। এখন সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি আলোচনা করতে হবে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন