‘পানিই জীবন, পানিই খাদ্য’

বিশ্বখাদ্য দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পানিই জীবন, পানিই খাদ্য’। দিবসটি সামনে রেখে বিশ্বখাদ্য সংস্থা খাদ্য হিসেবে পানির গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেছে। পানি সংরক্ষণ, পানির অপচয়রোধ এবং পানির বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রকমের ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেননা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য জীব ও উদ্ভিদের জন্য পানি অপরিহার্য। খাদ্য উৎপাদন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই মূল্যবান সম্পদ অসীম নয়। আমরা যে খাদ্যগ্রহণ করি এবং সেই খাদ্য যেভাবে উৎপাদিত হয় তার সবই পানি দ্বারা প্রভাবিত হয়। সকলে মিলে পানি সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়ে পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে এ বছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বিশ্বপানি উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৩ থেকে জানা যায়, বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। এর মধ্যে আফ্রিকার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পান করে।

পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখতে জীব ও উদ্ভিদের সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনে অব্যবস্থাপনা, সুষম বণ্টনে সমস্যা, অপচয়রোধ ও যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় সর্বত্র এই খাদ্যের পরিপূর্ণ যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সকলের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্বখাদ্য সংস্থার উদ্যোগে ১৬ অক্টোবর বিশ্বখাদ্য দিবস পালিত হয়।

১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখটিকে স্মরণ রেখে মূলত প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর ‘বিশ্বখাদ্য দিবস’ পালিত হয়।

বাংলাদেশের খাদ্য ও উৎপাদন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানা যায়, উৎপাদন বাড়লেও সচেতনতার অভাবে, সময় মতো ফসলকর্তনের শ্রমিক না-পাওয়ার কারণে ফসল উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত মোট ৬টি ধাপে প্রতিবছর ৩৭ মেট্রিক টন খাদ্য নষ্ট হয়। এই নষ্ট হওয়া খাদ্যের তালিকায় রয়েছে আউশ, আমন, বোরোধান, গম, ভুট্টা, আলু, মসুর . সরিষ, মরিচ, হলুদ। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ধান ও গমের ১০ শতাংশ ফসল ইঁদুর নষ্ট করে ফেলে।

যদিও স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চার গুণ (বিশ্বে তৃতীয়), গম দুই গুণ, ভুট্টা দশ গুণ ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ (বিশ্বে তৃতীয়)। এ ছাড়াও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। রপ্তানিও বাড়ছে। এর মধ্যে ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। এক দশকে বেড়েছে কাঁঠাল (বিশ্বে দ্বিতীয়), পেয়ারা (দুই গুণ বৃদ্ধি), আম (দুগুণ বৃদ্ধি), পেঁপে (আড়াই গুণ বৃদ্ধি), লিচুর (৫০ শতাংশ বৃদ্ধি) উৎপাদন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বারংবার জলবায়ু সংকটের চরম প্রভাব, যুদ্ধ ও মহামারির কারণে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আগাম সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। এরপরও জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ২০২১ সালে ‘ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স’ নামের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ,বাংলাদেশে বছরে ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যের অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি উৎপাাদিত খাদ্য বা তৈরি খাদ্য নষ্ট করে।

খাদ্য অপচয়রোধ করে সকলের খাদ্য অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ দিবসটি পালন করে।