নমুনা দিতে এসে সংক্রমণের ঝুঁকি

চমেক হাসপাতালের করোনা পরীক্ষায় নমুনা দিতে আসা মানুষের লাইন-সুপ্রভাত

সরেজমিন: চমেকে করোনা পরীক্ষা- দীর্ঘ লাইন, নেই সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই, আছে দুর্ভোগ #

রুমন ভট্টাচার্য :

রোববার সকাল সাড়ে ১০টা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা গেল একটি কাচঘেরা বক্সের সামনে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। সবার মুখে মাস্ক দেখা গেলেও ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্বের বালাই। একজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অন্যজন। চোখ গেল কাচের উপর লাগানো দুটি কাগজে। একটিতে লেখা রয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা আক্রান্ত রোগী ফ্লু কর্নার ও বিশেষ অবজারবেশন সেল। অন্যটিতে লেখা নন ফ্লু রোগী। সেই সাথে দেওয়া হচ্ছে করোনা নমুনার পরীক্ষার টিকিটও। অর্থাৎ প্রায় সবধরনের রোগী টিকিট কাটতে মিলেমিশে একাকার।
বক্সের পাশেই কয়েকজন আনসার সদস্য দাঁড়িয়ে থাকলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে তাদের কোনো কর্মকা- চোখে পড়েনি।
এরপর পৌনে ১১টায় হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের প্রবেশপথের বামপাশের করোনা ব্লকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে নমুনা পরীক্ষা দিতে আসা একসাথে দাঁড়ানো নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। নারীদের জন্য ছিল না আলাদা কোনো ব্যবস্থা। দু’একজন বয়স্ক মানুষ বসে আছেন হুইল চেয়ারে। পাশে দাঁড়ানো স্বজনেরা। বেশকয়েকজন নিচে বসা। একজনের মুখে লাগানো রয়েছে অক্সিজেন। তবে লাইনে দাঁড়ানো কাউকেই সামাজিক দূরত্ব মানতে চোখে পড়েনি। কাচের বক্সে দু’জন ব্যস্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহে। প্রবেশপথের বাইরে বসানো জীবাণুনাশক চেম্বারটিও ছিল বন্ধ। এ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের অনেকেই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
কথা হয় নমুনা দিতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে। সকলের অভিযোগ প্রায় একই। লাইনে দাঁড়িয়ে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ও আতঙ্ক ছিল কারো কারো মাঝে।
নমুনা দিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘শনিবার পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। প্রায় দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষপর্যন্ত আর দিতে পারিনি। আজ (রোববার) আবার এসে দিতে পারলাম। এখন রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখানে মাত্র ৩ ঘণ্টা নমুনা নেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে কেউ দিতে পারে আবার কেউ পারে না। অনেকে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। আবার অনেকে লাইনে দাঁড়াতে ভোরে ছুটে আসে।’ নমুনা পরীক্ষার সময় বাড়ানোর দাবি জানান তিনিসহ আরো বেশকয়েকজন।
রোগীর স্বজন শাকিল বলেন, ‘লাইনে কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। এসব দেখার কেউ নেই। নমুনা পরীক্ষার পর বুঝা যাবে কে নেগেটিভ, কে পজেটিভ। এর আগে নারী-পুরুষ সবাই একসাথে লাইনে দাঁড়ানো। ফলে নমুনা দিতে এসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি মনে হচ্ছে। অনেক রোগী আসছেন হুইল চেয়ারে। এসব রোগীর স্বজনদের রোগীর সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে তারাও সংক্রমিত হতে পারে।’
এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আফতাবুল ইসলামের সাথে রোববার দুপুর ২টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরে আবার বিকাল ৫টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, বর্তমানে চমেক হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিআইটিআইডি এর নমুনা পরীক্ষা। গত ২৬ মে বিআইটিআইডি ল্যাবের ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ করোনা পজেটিভ শনাক্ত হন। একই দিনে ওই ল্যাবের’ও একজন টেকনোলজিস্ট পজেটিভ শনাক্ত হন। যে কারণে ২৭ মে থেকে ল্যাবের কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। তবে সোমবার (১ জুন) থেকে পুনরায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিআইটিআইডি বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে চমেক হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে। ফলে রোগীদের ভোগান্তি কিছুটা বেড়েছে। বিআইটিআইডি এর পরীক্ষা চালু হলে চাপ ও ভোগান্তি দুটোই কম আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, গত চট্টগ্রামে ৯ মে তৃতীয় ল্যাব হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ল্যাব চালু হয়। ঐদিন সকাল থেকে চমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্থাপিত ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করা হয়।
এরপর ২১ মে পর্যবেক্ষণ ও আইসোলেশন ইউনিট মিলিয়ে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আলাদা একটি ব্লকে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয় চমেক হাসপাতালে।