শান্তি রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গুনিয়া :
পাহাড়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব ঐতিহ্যবাহী ফুল বিজু গতকাল সোমবার থেকে বুধবার তিনদিন ব্যাপী উৎসব শুরু হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাইয়ে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সরকারি বিধি মেনে স্বল্প পরিসরে কর্ণফুলী নদী ও ছড়ার পানিতে ফুল ভাসিয়ে ‘মা গঙ্গা’ নামে বিশেষ প্রার্থনা করেন।
কাপ্তাইয়ের চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারসহ স্থানীয় বিহারগুলোতে স্বল্প পরিসরে দায়কদায়িকাদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে উপজেলা ভিত্তিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কাপ্তাইয়ের চিৎমরম, কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, ওয়াগ্গা, রাইখালী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের জুমপাড়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পল্লীগুলোতে ঘরোয়াভাবে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটি পালন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চন্দ্রঘোনা জুমপাড়ার চাকমা পল্লীতে ফুল বিজু উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিশেষ প্রার্থনা, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জুমপাড়া মাঠে খেলাধুলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
ওয়াগ্গা ইউনিয়নের অনিল তংচংগ্যা, রাইখালীর রনজিত তংচংগ্যা বলেন, বাংলা বছরের চৈত্র মাসের শেষ দু’দিন ফুল বিঝু ও মূল বিঝু। বছরের শেষ দিনকে বলা হয় মূল বিঝু। নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিনকে বলা হয় “গজ্জ্যেপজ্যে বিঝু”। ফুল বিঝু’র দিনে প্রতি গৃহস্থ বাড়ির যুবক-যুবতী, সকল বয়সের ছেলেমেয়ে থেকে বয়োবৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা খুব ভোরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুল সংগ্রহ করে ফুলসহ (ভাত জরা ফুল) বিভিন্ন ধরনের ফুল সংগ্রহ করে গৃহে আনে। সে সব ফুলের কিছু অংশ নিয়ে নদীতে যায়। স্নান করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নতুন নতুন কাপড় পরিধান করে নদীর পাড়ে বালুর স্তুপ বা নদীর পাড়ে মাটির স্তুপ করে তার উপরে কলা পাতা এবং তার উপরে ফুল দিয়ে-পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা-ঘৃণা, মারামারি-হানাহানিকে বিদায় দিয়ে অনাগত নতুন বছরের সুখ-শান্তি প্রার্থনাসহ সমস্ত হিংসা-ঘৃণা, মারামারি-হানাহানি, সমস্ত গ্লানি না পাওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ হয়ে ‘মা গঙ্গা’ থেকে প্রার্থনা করে।
হরিনছড়া গ্রামের কনক চাকমা বলেন, বিজু উপলক্ষে যুবক-যুবতীরা গ্রামের বয়োবৃদ্ধদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্নান করিয়ে আর্শীবাদ নেয়। অনেকেই আবার দল বেঁধে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ মূর্তিগুলো দুধসহ ফুলে পানি দিয়ে স্নান করিয়ে অনাগত নতুন বছরের সুখ-শান্তি প্রার্থনাসহ জগতের সকল প্রাণীর প্রতি হিতসুখসহ মঙ্গল কামনা করে।
চন্দ্রঘোনা জুমপাড়ার রনেল ত্রিপুরা বলেন, তিনদিন ব্যাপী স্বল্প পরিসরে বিঝু পালন করতে প্রতিটি ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে হয়েছে। আঙ্গিনা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করে। ঘরের গৃহপালিত পশুদের ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। খাওয়া-দাওয়া বা ভাত মজা নিয়ে অনেকেই সবজি (তারা, বেদাগী, কাট্টল দিড়ি আগা, কেতগী, তিথাবিজি, টেঁকি শাক, জঙ্গলী আলু, কলা থুরসহ আরো অনেক প্রকার তরকারি) সংগ্রহে জঙ্গলে যায়। যা মূল বিজুর দিনে পাজন (পাঁচন) তৈরী করে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন।