নগরে কি কোনো পাহাড়ই থাকবে না

কাটতে কাটতে চট্টগ্রাম নগরকে প্রায় পাহাড়শূন্য করে ফেলা হয়েছে। যা-ও কয়েকটি কোনোভাবে টিকে আছে তা-ও তার ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে বলে। কোর্টবিল্ডিং, ডিসি হিল, সিআরবি ছাড়া নগরের অভ্যন্তরে আর তেমন পাহাড় নেই।

নগরের কিছু কিছু পাহাড় আছে ব্যক্তিমালিকানায় এরমধ্যে  অধিকাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। দু-চারটি টিকে আছে পারিবারিক ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে। এরকম একটি মনোরম পাহাড় জিইসি মোড় গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের বিপরীতে। এই পাহাড়টি কাটতে কাটতে সামান্য কিছু বাকি আছে এখন। অনেক আগে থেকে পাহাড়ের পশ্চিমাংশ কেটে কেটে দোকান হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে অংশটি ছিল সেখানে সেমিপাকা বাস কাউন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সুপ্রভাত বাংলাদেশে। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিডিএ এখানে বাস কাউন্টার গড়ে তোলার কোনো অনুমতি দেয়নি। প্রতিবেদককে সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার বলেছেন, এই স্থানে কোনো বাস কাউন্টার গড়ে তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি তাদের অনুমোদন দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে।

এই স্থানে বাস কাউন্টার করলে এই ব্যস্ততম সড়কে অধিক যানজট হবে বলে মনে করছেন সংািশ্লষ্টরা। কারণ পশ্চিম দিকে মাজারের গেটের আশেপাশে অন্তত ৩০টি বাস কাউন্টার আছে। যেখান থেকে ঢাকাসহ নানা স্থানে বাসগুলো ছাড়ে। এবার তার বিপরীত দিকেও যদি বাস দাঁড়াতে হয় তাহলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে।

চট্টগ্রামের পাহাড়কাটা নিয়ে আবিরাম বলা হলেও কার্যত তা বন্ধ করা যায়নি। কখনো প্রভাবশালীরা কখনো উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এনে পাহাড়কাটা অব্যাহত রেখেছে অনেকে।

গত শুক্রবার নগরীতে আয়োজিত একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গাছকাটা ও পাহাড়কাটার বিষয়টা খেয়াল রাখা হয় না। চট্টগ্রাম অপরূপ সৌন্দর্যের নগর। কিন্তু উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কেটে, পাহাড় কেটে সৌন্দর্যহানি ঘটানো হয়েছে। চট্টগ্রামকে শ্রীহীন করা হয়েছে। নগর উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে অনেক সময় খেয়াল রাখেনি। মন্ত্রী মহোদয় সঠিক বক্তব্যই দিয়েছেন। বছরের পর বছর নগরায়ণ ও বাণিজ্যিক লক্ষ্যে পাহাড় তথা প্রকৃতির ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এমনকি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানও এমন কর্মকা- থেকে দূরে নয়। তাই মন্ত্রী মহোদয় প্রকৃত অর্থেই বলেছেন শর্ষের মধ্যেই ভূত। এ বিষয়ে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ না নিলে বাদবাকি পাহাড়গুলোও বিলীন হয়ে যাবে অতি সহসা। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।