ধ্বংসযজ্ঞ কীভাবে বন্ধ করতে হয় জানা আছে: প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো সব কিছু ‘ধ্বংস করতে চায়’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধ্বংসযজ্ঞ কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা ‘জানা আছে’। যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা হবে জানিয়ে যাকেই নৌকা মার্কা দেওয়া হবে, তাকেই ভোট দিতেও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল রুটের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল শনিবার মতিঝিলের আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

দুপুরের পর আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চেপে মতিঝিলে যান আওয়ামী লীগ প্রধান। সেখান থেকে অংশ নেন জনসভায়। খবর বিডিনিউজের।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে জমায়েতে ব্যাপক জনসমাগম করে ক্ষমতাসীন দল। নেতা-কর্মীদের ভিড় দুই প্রান্তেই কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করি, সেই সময় আন্দোলনের নামে আমরা কী দেখলাম? মানুষকে হত্যা করা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, মানুষের ওপর হামলা করা।’

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের বিএনপি পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা (পুলিশ) কী দোষ করেছিল? তারা তো চাকরি করে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কথায় কথায় বাসে আগুন দেয়। তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করা, সবকিছু ধ্বংস করা।’

কেন ধ্বংস করবে?- এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কে অধিকার দিয়েছে? তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্টি। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ না করে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে, আমরা ছাড়ব না।’

আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে।’

বিএনপির নেতা কর্মীরা গাড়িতে চড়ে না কি না, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। বলেন, ‘জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তখন তারা কোথায় যাবে, কী করবে, সেটাও তাদের ভাবা উচিত।’

আরামবাগের সমাবেশে শেখ হাসিনা যোগ দেন মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করে। ট্রেনে চেপেই তিনি যান মতিঝিলে।
‘আমরা ওইসব বিশ্বাস করি না বলে এখনো ধৈর্য ধরে আছে দেশের মানুষ। কিন্তু কতদিন?…আবার জিনিসপত্র, খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না, সেখানেও বাধা দেয়। আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি।’

বিএনপি ‘ষড়যন্ত্র’ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘ওরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই বুঝে। কিন্তু এ ষড়যন্ত্র করে কোনোদিন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

‘কথায় কথায় বিদেশের মানুষের কাছে নালিশ করে। কারণ, দেশের মানুষের কাছে ঠাঁই নাই। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’

কারখানা ভাঙচুর নয়, পোশাক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ
ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা পোশাক শ্রমিকদের বিএনপি উসকানি দিচ্ছে এমন অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আমলে (১৯৯১ থেকে ১৯৯৬) মাত্র ৫০০ টাকা মজুরি ছিল। আওয়ামী লীগের সরকারের ১৯৯৬ আমলে বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল।’

বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে এক টাকাও বেতন বাড়ায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই বেতন আবার বাড়ানো হয়েছে। বেতন আরও বাড়ানে মজুরি রোর্ড কাজ করছে জানিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উসকানি দিচ্ছে সেটা আমরা জানি।’

‘অন্যের কথায় নেচে’ কারখানায় হামলা করে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করলে ‘নিজেদেরই ক্ষতি’ হবে বলেও সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কমাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবে। আপনাদের যা প্রয়োজন হয়, অসুবিধা হয় আমরা দেখি।’

শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছে বলে জানান তিনি। ভর্তুকি মূল্যে খাবার কিনতে টিসিবির পারিবারিক কার্ড নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সারা পৃথিবীতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, তার জন্য পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যাতে স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারে।’

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ওরা ভোট চোর, জনগণের সম্পদ চোর। ওই চোরদের ঠাঁই বাংলাদেশের মাটিতে নেই। ওরা দেশের মর্যাদা নষ্ট করেছিল, আমরা মর্যাদা উন্নত করেছি। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

‘যাকেই নৌকা মার্কা, তাকেই ভোট’
যে কোনো সময় আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেব তার হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে, যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়নের কাজ বাকি, সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি।’

‘যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা, খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছি বলেই আজকে এত উন্নতি হচ্ছে। সেই কথাটা যেন সবাই মনে রাখেন।’

এরপর সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে শপথও করান শেখ হাসিনা। নেতা-কর্মীরাও হাত নেড়ে সমর্থন জানান।

পরে শেখ হাসিনা ‘এবার জিতবে নৌকা’সহ নানা স্লোগান ধরেন। নেতা-কর্মীরাও তার জবাব দেন।

‘আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না, আর শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না’ বলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরনো একটি বক্তব্যও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর। এখন নিজেই (খালেদা জিয়া) ভেবে দেখুক কে কোথায় আছে। তার ওই কথা আজকে তাদের বেলায় ফলে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ আগামীবারও জনগণ নৌকা ভোট দেবে এবং জনগণের সেবা আমরা করে যাব।’

কখনো গর্ব করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ ও এইদিকে জনগণের ভোট। আমার কাছে ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া। আমি জনগণের সেবা করতে চাই, সেবা করে যাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ নিরাপদ থাকে আর বিএনপি পারে জনগণের ভোট চুরি, অর্থ চুরি, জনগণকে হত্যা করা, সরকারি-অসরকারি, সামরিক কর্মকর্তাদের্ চাকরি খাওয়া, তাদের উপর নির্যাতন।’

বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা আসলে এ দেশকে টিকতে দেবে না। সেই জন্য জনগণের স্বার্থে, কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন।