নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি :
চা শিল্প, বাংলাদেশের একটি অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। ২০২০ সালে চা শিল্পের সফলতার মধ্যে ব্র্যাকের অবস্থান ছিল শীর্ষে। ব্র্যাকের মালিকানায় এন্টারপ্রাইজ প্রোগ্রামের আওতাধীন আয়তনে এশিয়ার বৃহত্তম ব্র্যাক র্কণফুলী চা বাগান, ব্র্যাক কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান এবং ব্র্যাক কোদালা চা বাগান। বাংলাদেশের চা শিল্পের তথা দেশের অর্থনীতিতে এই বাগান গুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এই বছর সারাদেশে ১ম অবস্থান অর্জন করে কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্র্যাক চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট চা উৎপাদন হয় ৮ কোটি, ৬৩ লক্ষ, ৯০ হাজার কেজি। তার মধ্যে ব্র্যাকের তিনটি চা বাগানের মোট উৎপাদন ছিল ৩১ লক্ষ, ৭২হাজার, ২৫৯ কেজি। বাংলাদেশে চা উৎপাদন যেখানে গত বছরের তুলনায় ১০.০১ শতাংশ কম, সেখানে ব্র্যাকের পরিচালনাধীন বাগানে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় মাত্র ১.৪৬ শতাংশ কম।
২০২০ সালে বাগান তিনটির উৎপাদিত চায়ের গড় বাজার মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২২৯.১৬ টাকা আর বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের জাতীয় গড় বাজার মূল্য ছিল প্রতি কেজি ১৮৯.২৫ টাকা। ব্র্যাক জাতীয় বাজার মূল্যের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২১ শতাংশ বেশি ছিলো। ২০২০ সালে নিলাম বাজারে ব্র্যাকের তিনটি বাগানের উৎপাদিত চা বাজার মূল্যের উচ্চতায়, ১৫ এর মধ্যে স্থান করে নেয়।
এর মধ্যে ব্র্যাক কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান প্রথম স্থান, ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান ষষ্ঠ স্থান এবং ব্র্যাক কোদালা চা বাগান ১৩ তম স্থান অর্জন করে। ব্র্যাক কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান পরপর দুই বছর (২০১৯,২০২০) নিলাম বাজারে প্রথম স্থান অর্জন করে। চা উৎপাদনে বাগানের মধ্যে ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান বাজার মূল্যে ১ম স্থানে রয়েছে। কোম্পানী হিসাবে চায়ের বাজার মূল্যের অবস্থানের দিক থেকে ব্র্যাক ১ম স্থানে রয়েছে। ব্র্যাকের আওতাধীন তিনটি চা বাগানে প্রতি বছর ১৫০ একরের উর্দ্ধে নতুন চা আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সম্পাদনের জন্য নিজস্ব হাসপাতাল ঔষুদের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য বাগানের অভ্যন্তরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি স্কুল রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাগানে মহিলা শ্রমিক ও শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে ও তাদের সার্বিক কল্যানে দুই জন মহিলা ওয়েলফার অফিসার রয়েছে। ব্র্যাকে চা বাগানের শ্রমিক ও শিশুদের জন্য ক্রেস হাউজ আছে এবং তাদেরকে প্রতিদিন পুষ্টি জাতীয় খাবার সরবরাহ করা হয়। ব্র্যাক জলবায়ু মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে তারই ধারাবাহিকতায় চা বাগান গুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ রোপণ করা হয়েছে। কীটনাশক, বালাইনাশক এবং আগাছা দমনের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে যাতে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব না পড়ে। এদিক বিবেচনা করে পরিবেশ বান্ধব বালাইনাশক ও আগাছানাশক ঔষধ ব্যবহার করে আসছে। ব্র্যাকের তিনটি বাগানে প্রচুর পরিমাণে আগর গাছ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আগর গাছ রোপণের উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার-২০০৯ এ ভূষিত হয়। ব্র্যাক প্রতি বছর উৎপাদন ও গুনগতমান বৃদ্বির নিদিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাগান পরিচালনা করে আসছে। ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম আরো জানায়, ২০২০-২০২১ সালে চা বাগানগুলো তীব্র খরার সম্মুখীন হচ্ছে। বাগান গুলিতে বৈদ্যুতিক সুবিধার আওতায় সেচ (আন্ডার গ্রাউন্ড ইরিগেশন) এর সুব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু বাগান গুলোতে বিদ্যমান জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ প্রদানের জন্য পানির তীব্র সংকট হচ্ছে।
চা বাগানগুলো বিগত ২০ বছরের মধ্যে এরকম তীব্র খরার সম্মুখীন হয়নি। তাই বর্তমানে বাগান গুলোতে জলাশয় বৃদ্ধি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা অতীব জরুরি। বাংলাদেশ চা বোর্ড এর মাধ্যমে নতুন জলাশয় ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন করার জন্য একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক বাগান মালিকদেরকে প্রনোদনা দেওয়া/সুলভ মূল্যে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে চা বাগানগুলো আরও উন্নতি সাধনে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করেন।